‘কেউ অভাবে আর কেউ লোভে দুর্নীতি করে’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, “দুর্নীতি এদেশের সকল ক্ষেত্রেই বিরাজমান। কেউ দুর্নীতি করে অভাবে আর কেউ করে লোভে।”
শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মিলনায়তনে আয়োজিত ড. এম এ রশীদ স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, “আমাদের দেশে দেখা যায়, একটি প্রকল্প তৈরি করার সময় এর আশেপাশের জীবনের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়। এই পরিবর্তন যে সবসময় ইতিবাচক হয়, তা নয়। এখানেও দুর্নীতি হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না।”
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ইঞ্জিনিয়ার শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে ইঞ্জিন চালক। শব্দটি এখন আর সেই অর্থে পরিচিত নেই। এ দেশের প্রকৌশলীরা হয়তো তাদের পেশাগত ও নৈতিক মুল্যবোধগত নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। এসব বিষয়ে দেশের জনগণ অবহিত আছে বলে মনে হয় না। এই নীতিমালা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করাটাও প্রকৌশলীদের সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে পরে।
ড. রশীদ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি ছিলেন প্রকৌশল শিক্ষার একজন আদর্শ পুরুষ। নিজ কর্মক্ষেত্রের পরিধি ছাড়িয়ে তিনি সমাজে ও রাষ্ট্রে সমানভাবে অবদান রেখেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা ভুলে জীবনের পুরোটা সময় কাজ করে গেছেন শুধু মানুষের জন্য। শিক্ষক হিসেবে সততা, আদর্শ ও কর্মনিষ্ঠার সমন্বয়ে তিনি ছিলেন এক স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বুয়েটের সাবেক উপাচার্য এমেরিটাস অধ্যাপক ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন, রশীদ স্যার প্রখর স্মৃতি শক্তির অধিকারী ছিলেন। কোনো কাজকেই তিনি কখনো ছোট মনে করতেন না। তিনি দেখতে মৌলভীদের মতো হলেও কখনো ধর্ম নিয়ে কথা বলতেন না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা নীতি ও প্রকৌশল নীতি নিয়ে কথা বলতেন তিনি। তিনি ছিলেন আগা-গোড়া একজন প্রগতিশীল মানুষ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আজ মর্যাদা, সুনীতি ও নিয়মানুবার্তিতার যে আদর্শে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়েছে, এই অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল তাঁরই হাত ধরে। দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ ও মহান অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৮২ সালে সরকার তাঁকে মরণত্তোর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ যতোদিন থাকবে, ততোদিন অধ্যাপক ড. এম এ রশীদের নাম মানুষ মনে রাখবে।
বুয়েটের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ রশীদের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ড. এম এ রশীদ ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. এম এ রশীদের স্মরণে প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক খালেদা একরামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- অধ্যাপক ড. এম এ মতিন। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পুরোকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রউফ, ৬১ ক্লাব এর প্রতিনিধি এবং প্রাক্তণ সভাপতি এ কে এম আব্দুর রশীদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বুয়েটের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ রশীদ ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালের ৬ নভেম্বর এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ৬২ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এমএইচ/আরএস/এমএস