বঙ্গোপসাগরে জিম্মি শতাধিক মাঝি-মাল্লা : চলছে দরকষাকষি


প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬
ফাইল ছবি

গভীর বঙ্গোপসাগরে বোটসহ জলদস্যুদের কাছে আটক ফিশিংবোট মাঝি-মাল্লারা চারদিনেও মুক্তি পায়নি। এসব বন্দিদের আহার না দিয়ে উল্টো অমানসিক নির্যাতন করছে জলদস্যুরা। আর এসব নির্যাতনের শব্দ মোবাইলে স্বজনদের শুনিয়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের দরকষাকষি করছে জলদস্যুবাহিনী। এ ঘটনায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে বন্দিদের স্বজনরা।

এদিকে জিম্মিদশা থেকে তাদেরকে উদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও কোনো সহযোগিতা দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ বন্দিদের পরিবারের।

তীরে ফিরে আসা মৎস্য শিকারি ও বোটমালিকেরা জানিয়েছেন, খুলনার সুন্দরবনের পশ্চিম হাঁড়িতে গত মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকালে তাণ্ডব চালিয়ে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার ১২টিসহ অন্যান্য এলাকার প্রায় ৩০টি ফিশিংবোটের শতাধিক মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে সশস্ত্র জলদস্যুবাহিনী। তৎমধ্যে কুতুবদিয়ার ১৮ জন রয়েছে।

কুতুবদিয়ার বন্দি মাঝি-মাল্লারা হলেন, বড়ঘোপের হাজী ছাবের কোম্পানির ২টি বোটের আফজাল ও মাহবুবুল হক। একই এলাকার আবদুর রশীদ বইল্যা কোম্পানির ১টি বোটের জিয়াউল হক ও গিয়াস উদ্দিন। সত্য বহদ্দারের ২টি বোটের আজলা দাশ ও আনন্দ দাশ। দিদার কোম্পানির ১টি বোটের মাঝি কালা সোনা। বিবিসেন কোম্পানির একটি বোটের মাঝি আদিনাথ দাশ প্রকাশ গুরা বুইজ্যা। ইসমাঈল কোম্পানির একটি বোটের মাঝি কালু, ইউনুছ ও মনসুর। আলী আকবর ডেইল কুমিরার ছড়ার রত্নসেন কোম্পানির ২টি বোটের নুর হুছাইন, সুজন, সাজু, সুভাষ ও ওসমান। একই এলাকার শেখ কামালের ১টি বোটের নাসির ও লেডু। আলমগীর কোম্পানির ১টি বোটের রহিম ও মিন্টু জলদাশ। একই এলাকার ফরিদ কোম্পানির বোটকে ধাওয়া করলেও ধরতে পারেনি বলে জানান বোটের মাঝি আবুল কালাম।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত জলদস্যুরা ‘রামপাল’ এলাকার মাস্টার ও হালিম বাহিনীর অনুসারী বলে উল্লেখ করেছেন মৎস্য শিকারিরা।
 
তারা আরো জানায়, দস্যুরা মালামাল লুটের চেয়ে মাঝি-মাল্লা ধরে নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের সঙ্গে কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় এলাকার বহু জলদস্যুর ঘনিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে বলেও দাবি ভূক্তভোগীদের। আটকদের বিষয়ে প্রশাসন কিংবা গণমাধ্যমে তথ্য না দিতেও শাসিয়ে দিচ্ছে জলদস্যুরা। তাই জীবন ক্ষয়ের আশঙ্কায় বন্দিদের স্বজনরা নিজেদের মনোকষ্টের কথা কাউকে খুলে বলতে ভয় পাচ্ছেন।
 
জলদস্যুরা অজ্ঞাতস্থান থেকে মোবাইল ফোনে প্রথমে জনপ্রতি ২০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করে আসলেও বর্তমানে তা থেকে সরে এসে ১০-১২ লাখ টাকা দাবি করছে বলে মৎস্যজীবীরা অভিযোগ করেন।

তাদের দাবিকৃত টাকা না পেলে বন্দিদের মুক্তি দেয়া হবে না। পাশাপাশি কোনো বোট সাগরে নামতে পারবেনা বলে হুমকি দিচ্ছে জলদস্যুবাহিনী। গভীর সমুদ্র এলাকার ঘটনা উল্লেখ করে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলো সহায়তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় নির্যাতনের ভয়ে অনেক মৎস্যজীবী মাছ ধরার এ পিক আওয়ারে সাগরে যেতে ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ছে।

কুতুবদিয়া ফিশিংবোট মালিক সমিতির নেতা হাজী ছাবের আহমদ কোম্পানি ও জয়নাল আবেদীন কোম্পানিসহ অনেকে বলেন, সাগরে মৎস্য আহরণ পেশায় কোটি কোটি টাকার পূঁজি বিনিয়োগ করে আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে মৎস্য আহরণ পেশা ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন পেশায় বিনিয়োগ করতে হবে উপকূলবাসীকে।  

কুতুবদিয়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএস থোয়াই বলেন, ঘটনাটি বোটমালিকদের কাছ থেকে জেনেছি। গভীর সমুদ্রের বিষয় যেহেতু চাইলেও কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে কোনো করণীয় আছে কিনা জানতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলীর মুঠোফোনে কয়েক বার কল দেয়া হয়। রিসিভ না করায় ক্ষুদ্রবার্তাও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় ঊর্ধ্বতন এসব কর্মকর্তার বক্তব্য জানা যায়নি।ৎ

এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।