টিপু হত্যা: শুটার মাসুমের মোটরসাইকেলচালক শামীম নজরদারিতে
রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতিকে হত্যায় কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আরেক ব্যক্তির নাম পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাকে এরই মধ্যে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় তিনি গ্রেফতার হতে পারেন তিনি।
ডিবির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ওই ব্যক্তির নাম মোল্লা শামীম। তিনি শুটার মাসুমের বন্ধু। ঘটনার দিন মাসুমকে মোটরসাইকেলে করে শাহজাহানপুরে টিপুর মাইক্রোবাসের সামনে নিয়ে যান শামীম।
এদিকে, ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া শুটার মাসুম মো. ওরফে আকাশ সাতদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। টিপুকে গুলি করে হত্যার কথা শুটার মাসুম মো. ওরফে আকাশ স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছে ডিবি।
গত ২৭ মার্চ বগুড়া থেকে মাসুমকে গ্রেফতারের পর ওই দিন দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান (অতিরিক্ত কমিশনার) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ঘটনার দিন (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর জাহিদুল ইসলাম টিপুর রেস্টুরেন্টের কাছে যান মাসুম। সেখানে অনেক লোকজন থাকায় গুলি করতে না পেরে টিপুর গাড়ি অনুসরণ করতে থাকেন। টিপুর গাড়ি শাহজাহানপুর রেল লাইনের আগে আমতলা সংলগ্ন রাস্তায় যানজটে আটকা পড়লে টিপুকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়ার পরও মাসুম বিশ্বাস করতে পারেনি সে গ্রেফতার হচ্ছেন। তার ধারণা ছিল তিনি গ্রেফতার হবেন না। তবে সিসি ক্যামেরায় প্রাপ্ত ছবি ও তথ্য উপাত্ত বিবেচনায় আমরা তাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই। সে সুঠাম দেহের অধিকারী। তার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। তার স্ত্রী ও পরিবার রয়েছে। বিভিন্ন মামলা ও সমস্যার কারণে সে এলাকায় যেতে পারত না। পুরাতন মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে সে এমনটা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতার মাসুম ঘটনার আগের দিন ২৩ মার্চ টিপুকে রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় যাওয়ার রাস্তা অনুসরণ করে গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু বেশি লোকজন থাকায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর ২৪ মার্চ অজ্ঞাত এক ব্যক্তি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মাসুমকে জানায় টিপু তার অফিসে (রেস্টুরেন্ট) অবস্থান করছে। এই সংবাদ পেয়ে মাসুম টিপুর রেস্টুরেন্টের কাছ থেকে টিপুকে অনুসরণ করে গুলি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু টিপু অনেক লোকজনের মধ্যে থাকায় গুলি করতে না পেরে টিপুর গাড়ি অনুসরণ করতে থাকে।
ডিবি প্রধান বলেন, গুলি করার পর তার দুই বন্ধুর সহযোগিতায় নিরাপদ স্থানে আত্মগোপনে থাকে। তবে সে জানায় প্রীতি হত্যা তার পরিকল্পনায় ছিল না। পরে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিকশার যাত্রী প্রীতি এবং টিপুর মৃত্যুর সংবাদ দেখতে পায়।
গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় তিনি নিজ গাড়িতে করে বাসায় যাচ্ছিলেন। গাড়ি যানজটে পড়ার পর মোটরসাইকেলে আসা হেলমেট পরা এক যুবক টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এলোপাতাড়ি গুলিতে রিকশায় থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও হন গুলিবিদ্ধ।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।
টিটি/আরএডি/জেআইএম