স্বপ্নের মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী তিনি
পুরো নাম মেহের আফরোজ চুমকি। ছোট করে সবাই চুমকি বলে ডাকেন। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। এক সময় নানা রকম স্বপ্ন বুনতেন এদেশের অসহায় মহিলা ও শিশুদের নিয়ে কাজ করার। আর সে লক্ষ্যে শিশু সংগঠন করতেন। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা তার সেই স্বপ্নের কথা যানতেন কিনা জানিনা, বর্তমানে তিনি তার স্বপ্নের মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। সেই সুবাধে তিনি এখন দেশের মন্ত্রিসভার সদস্য। শৈশবে তিনি যে স্বপ্ন মনের মধ্যে লালন করেছিলেন, তা এখন বান্তবায়ন করছেন। মুকুল ফৌজ সংগঠনের সেই স্বপ্ন, আজ প্রতিমন্ত্রী হয়ে বাস্তবায়ন করছেন। এদেশের দরিদ্র সহায়-সম্বলহীন নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। তবে, প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এখনই থামতে চান না। দেশের প্রতিটি নারীর মুখে হাসি এবং প্রতিটি শিশুকে শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে তবেই তিনি সার্থকতার শেষ হাসি হাসতে চান।
পরিচিতি
তিনি ১৯৫৯ সালের ১ নভেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. ময়েজউদ্দিন আহমেদ ও মাতা বিলকিস আহমেদ, পাঁচ বোন ও এক ভাই এর মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার বাবা শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদ একাধারে ছিলেন, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজ সেবক। ১৯৭৩ সালে দেশের জাতীয় নির্বাচনে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। শহীদ ময়েজউদ্দিন রেড ক্রিসেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু ও অন্য আসামিদের পক্ষে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৮৪ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি কালীগঞ্জের রাজ পথে শহীদ হন।
শৈশব
প্রতিমন্ত্রী চুমকির শৈশব কেটেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তরপুর ইউনিয়নের বড়হরা গ্রাম ও রাজধানী ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায়। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে পড়ার সময়কালেই তিনি যোগদেন শিশু সংগঠন মুকুল ফৌজে। বদরুন্নেছা কলেজে পড়ার সময়ও শিশু সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করেন তিনি। এসময় বাবার রাজনৈতিক জীবনেরও প্রভাব পড়ে তার জীবনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাবা শহীদ ময়েজউদ্দিরের রাজনৈতিক জীবন ও আদর্শ কাছ থেকেই দেখার সুযোগ হয় তার। আর তখন থেকেই রাজনৈতির হাতে-খড়ি হয় বাবার কাছ থেকে।
শৈশবের সংগঠন মুকুল ফৌজ
শিশুদের কল্যাণে ১৯৬৯ সালের আগে প্রতিমন্ত্রী চুমকি যোগদেন শিশু সংগঠন ‘মুকুল ফৌজে’। তারপর নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার পর রাজনীতি শুরু করেন। এরপর আর তিনি পিছু ফিরে তাকাননি। মুকুল ফৌজের সেই প্রত্যয় বুকে ধারণ করে আজ হয়ে উঠেছেন প্রতিমন্ত্রী। এখন তিনি ভাবেন তৃণমূল পর্যায়ে যেভাবে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে, রাজনীতির উঁচু পর্যায়েও এই সংখ্যা প্রত্যাশিত হবে একদিন। প্রতিটি শিশুর শিক্ষা ও বাসযোগ্য হবে বাংলাদেশ। তিনি অতি কম সময়ের মধ্যে নারী ও শিশুর উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখার সুযোগ পান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্সসহ মাস্টার্স পাস করেন। পরবর্তী সময়ে রাজনীতি ও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৯৫ সালে রমনা থানার ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে গাজীপুর ও নরসিংদীর জেলায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) থেকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের শেষের দিকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। এর আগে একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে একই আসন থেকে পুনরায় সাংসদ নির্বাচিত হন এবং একই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বর্তমানে কমনওয়েলথ উইমেন অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টারদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়া, নারী ও শিশু উন্নয়নে জাতীয় কমিটির সদস্য, অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান (ওয়াটার, সেনিটেশন ও হাইজিন), জাতীয় এইডস কমিটির সদস্য ও ফ্যামিলি প্লানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর আগে তিনি ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভানেত্রী ও আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর মহিলা ও শিশু উন্নয়নে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পান তিনি।
সাফল্য
দেশের ৪৪ শতাংশ শিশুর মধ্যে প্রায় অর্ধেক কন্যাশিশু। যাদের প্রত্যেকের শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নারী ও শিশুদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন কাজ করছেন । দেশের দুর্গম এলাকায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যে ২ হাজার ১০৯টি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করছেন। বর্তমান সময়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনার পর সহিংসতা রোধে মনিটরিং এবং সচেতনতামূলক প্রথম কাজ বাংলাদেশে শুরু করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় মহিলাদের জন্য তথ্য আপা চালু করেছেন।
প্রত্যাশা
রাজনীতির উচ্চ পর্যায়ে নারীর সংখ্যা এখনও হাতেগোনা। সেই সংখ্যাটা বৃদ্ধি হওয়া উচিত। রাজনীতির অঙ্গনটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গন নারীদের জন্য। যেখান থেকে নারী শুধু তার নিজের অধিকার আদায় করবে না, সমষ্টিগত, গোষ্ঠীগত, অধিকারের জন্য কথা বলতে পারে, পলিসি তৈরি করতে পারে এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারে। তখনই তা সম্ভব, যখন রাজনীতির উচ্চ পর্যায়ে নারীরা তাদের অবস্থান তৈরি করতে পারে। এ সংখ্যা এখনও প্রত্যাশিত না হলেও যেভাবে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে তিনি আশাবাদী সেই সংখ্যাটা একদিন উপরের দিকে পৌঁছাবে। আর তখনই নারীর পুরোপুরি ক্ষমতায়ন হবে। প্রতিটি শিশু শিক্ষার অধিকার ও বাসযোগ্য হবে বাংলাদেশ।
এমএএস/এমএস