স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন আইনমন্ত্রীর বাবা সিরাজুল হক
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) ২০২২ পেলেন অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক। তিনি বর্তমান সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের বাবা।
আইনমন্ত্রী সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় তার ভাগনে ব্যারিস্টার শেখ মো. ইফতেখারুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) ঢাকায় আয়োজিত স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক এ সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেন।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবছর দেশের নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছে সরকার।
নিজের বাবার সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান:
সিরাজুল হকের পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় হলেও পিতার কর্মসূত্রে তিনি ১৯২৫ সালের ১ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন সিরাজুল হক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনসহ স্বাধিকার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ও সিরাজুল হক কলকাতায় একসঙ্গে বেকার হোস্টেলে থাকতেন। বঙ্গবন্ধু পড়তেন ইসলামিয়া কলেজে এবং সিরাজুল হক প্রেসিডেন্সি কলেজে।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা জেলার কসবা-বুড়িচং নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে এমএনএ নির্বাচিত হন সিরাজুল হক। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতপূর্বক মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান তিনি এবং সেই থেকে যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে বাংলাদেশের যে প্রতিনিধিদল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন তার অন্যতম সদস্য ছিলেন সিরাজুল হক।
১৯৭২ সালে গঠিত গণপরিষদের সংবিধান কমিটির অন্যতম এ সদস্য ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কসবা ও আখাউড়া নিয়ে গঠিত তৎকালীন কুমিল্লা-৪ (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ কসবা-আখাউড়া) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের অক্টোবরে বঙ্গভবনে খুনি খন্দকার মোশতাক তৎকালীন এমপিদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করেন। উক্ত বৈঠকে সিরাজুল হক প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি বলা যায় না মর্মে দ্বিধাহীন চিত্তে ঘোষণা করেন।
মরহুম সিরাজুল হক উপমহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন। পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং এরপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সনদ পান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ ১৯৫৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে তার বেশিরভাগেরই আইনজীবী ছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মার্শাল ল'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোয় ১৯৮২ সালের ১০ অক্টোবর তাকে তৎকালীন সরকার গ্রেফতারপূর্বক কারাগারে পাঠায়। ১৯৯৬ সাল থেকে আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেল হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন। তিনি ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে সিরাজুল হক বেগম জাহানারা হকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যার জনক ছিলেন। তার ছোট ছেলেন মরহুম আরিফুল হক রনি এবং একমাত্র কন্যা মরহুমা সায়মা ইসলাম। সিরাজুল হকের সহধর্মিণী বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম জাহানারা হক ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাকেও বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম