সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ মারা গেছেন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ১৯ মার্চ ২০২২
ফাইল ছবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ (৯২) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান তিনি।

বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ও ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দুবার দায়িত্বপালনকারী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি প্রথমে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। তার পিতা তালুকদার রিসাত আহমেদ একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সাহাবুদ্দীন ময়মনসিংহের নান্দাইলে তার বোনের বাড়িতে বড় হন। তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। তিনি তিন কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক। তার জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। দ্বিতীয় কন্যা সামিনা পারভীন একজন স্থপতি। তার পুত্র শিবলী আহমেদ পরিবেশ প্রকৌশলী।

সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানি সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রথমে লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমি এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার কর্মজীবনের সূচনা। এরপর তিনি গোপালগঞ্জ ও নাটোরের মহকুমা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি সহকারী জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর ১৯৬০ সালে তিনি প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তাকে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টের বেঞ্চে তাকে বিচারক হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঢাকা ল’ রিপোর্ট, বাংলাদেশ লিগ্যাল ডিসিশন এবং বাংলাদেশ কেস রিপোর্টসে সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রচুর রায় প্রকাশ করা হয়। চাকরি সম্পর্কিত, নির্বাচন নিয়ে কলহ, শ্রম ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক ইত্যাদি কেসে তার গৃহীত বিচারের রায় বহুল সমাদৃত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী সম্পর্কিত মামলায় তার দেওয়া রায় যুগান্তকারী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের পরিশোধনের পথ উন্মুক্ত করে।

এফএইচ/কেএসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।