মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের ধর্মঘট ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত
পদবির নাম পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের চলমান ধর্মঘট আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
শনিবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতি (বাবিককাকস) ও বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) এক যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা কালেক্টরেট রিক্রিয়েশন ক্লাবে অনুষ্ঠিত সভায় বাকাসসের সভাপতি মো. আকবর হোসেনসহ দুটি সংগঠনের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর মধ্যে দাবিপূরণ না হলে আগামী ১ এপ্রিল ঢাকায় মহাসমাবেশে সংগঠন দুটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। শনিবার রাতে বাবিককাকসের মহাসচিব কাজী মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।
পদবির নাম পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ১ মার্চ থেকে মাঠ প্রশাসনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু হয়। ফলে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নাম জারি, জলমহাল, চলমান টেন্ডার কার্যক্রম, ইজারা মূল্য আদায়, অর্পিত সম্পত্তির লিজমানি আদায়, মিসকেস ও গণশুনানির মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ। এতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে মাঠ প্রশাসনে।
বাবিককাকসের মহাসচিব বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমরা আমাদের কর্মসূচি আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছিলেন, সেটি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১ এপ্রিল প্রেস ক্লাবে মহাসমাবেশ হবে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বেতন না বাড়িয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনে যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা কর্মচারীরা মেনে নেবে না বলেও জানান কাজী মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এভাবে পদবি পরিবর্তন হলে ১৪, ১৫ ও ১৬ গ্রেডের কর্মচারীরা কোনোদিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে পারবেন না।
গত ২ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ধর্মঘট ডাকা কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলাম। সেখানে দাবি পূরণে কাজ চলছে, কর্মসূচি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। ৫ মার্চ সবাইকে নিয়ে সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন বাবিককাকস ও বাকাসস মহাসচিব।
পরে ৫ মার্চ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট কর্মসূটি চলবে। পরে আন্দোলন করা মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ৮ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখা থেকে পাঠানো এক চিঠিতে পদবি পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিতে সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে বলা হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, মাঠ প্রশাসনে কর্মরত গ্রেড-১৩, গ্রেড-১৪ ও গ্রেড-১৫ ভুক্ত কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, গ্রেড-১০ ভুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদের ফিডার পদ হিসেবে গ্রেড-১৩ ভুক্ত তিনটি পদ (অফিস সুপারিনটেনডেন্ট, সিএকাম উচ্চমান সহকারী ও সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর) রয়েছে। পদোন্নতির পদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফিডার পদের পদবি যুগোপযোগী করা সমীচীন হবে।
এতে বলা আরও হয়, অফিস সুপারিনটেনডেন্ট, সিএকাম উচ্চমান সহকারী ও সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরদের (গ্রেড-১৩) প্রস্তাবিত পদের নাম সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সুপারিশ করা পদের নাম উপ-সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
প্রধান সহকারী, ট্রেজারি হিসাব রক্ষক, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং পরিসংখ্যান সহকারীর (গ্রেড-১৪) প্রস্তাবিত পদের নাম উপ-সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা-১ এবং সুপারিশ করা পদের নাম সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
উচ্চমান সহকারীর (গ্রেড-১৫) প্রস্তাবিত পদের নাম উপ সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সুপারিশ করা পদের নাম উপ-সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
বেতন গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে এ প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য শিগগির জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু এই প্রস্তাব মানছেন না আন্দোলনরত কর্মচারীরা।
একজন কর্মচারী নেতা বলেন, ‘গত বছরের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেওয়া এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ৩১ মার্চ পাঠানো প্রস্তাব এবং ৩০ জুন পাঠানো ব্যাখ্যার আলোকে প্রস্তাব দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন চাই আমরা।
বাবিককাকস ও বাকাসসের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির নেতারা জানান, তারা সরকারের প্রশাসনিক কাজে, আইনশৃঙ্খলা, ভ্রাম্যমাণ আদালত, দেশে দুৰ্যোগ-বন্যা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন, মহামারি কোভিড-১৯ সহ সব ধরনের উন্নয়ন কাজে মাঠ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) সহযোগী হিসেবে আদেশ নির্দেশ পালন করে থাকেন। অথচ এ পর্যন্ত ৩২টি দপ্তর ও অধিদপ্তরের ১৬তম গ্রেডের কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনসহ ১০তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (সাবেক তহশিলদার) এবং ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (সাবেক সহকারী তহশিলদার) পদ পরিবর্তনসহ বেতন গ্রেড ৫ ধাপ এগিয়ে অর্থাৎ ১৬ ও ১৭তম গ্রেড থেকে ১১ এবং ১২তম গ্রেড দিয়ে আদেশ জারি করা হয়।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারী এবং বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারীরা পদবি পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীতের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত বছর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনও মিলেছিল। এরপরও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুটি সংগঠনের নেতারা।
আরএমএম/এমএএইচ/