মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েও সরে দাঁড়ালো সংসদীয় কমিটি
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ এনে তা তদন্তের উদ্যোগ নিয়েও সরে গেছে সংসদীয় কমিটি। জাতীয় সংসদ ভবনে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিটির ১৬তম বৈঠকে ওই উদ্যোগ প্রত্যাহার করা হয়।
গত বছর হজের সময় মন্ত্রী নিজে লোক পাঠিয়েছেন, হাজিদের জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুর্নীতি, ট্রলি ব্যাগ কেনা এবং মন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকায় ধর্মীয় উপসানালয়ে বেশি বরাদ্দসহ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসার পর এনিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আসলামুল হক, সাধন চন্দ্র মজুমদার, একেএমএ আউয়াল (সাইদুর রহমান), আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন, সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, মো. মকবুল হোসেন এবং মোহাম্মদ আমির হোসেন অংশ নেন। বৈঠকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
১৫তম বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ওই বৈঠকে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, আওয়ামী লীগের একেএমএ আউয়াল (সাইদুর রহমান), কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
হজ ব্যবস্থাপনা সংসদীয় উপ-কমিটির সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, হাজি পাঠানো থেকে শুরু করে সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় চলতি বছরের মত বিশৃঙ্খলা অতীতে কখনও হয়নি। হজ পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তার প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংসদীয় কমিটির সুপারিশকে পাস কাটিয়ে এবং কমিটিতে বিষয়টি আড়ালে রেখে ধর্মমন্ত্রী তার পরিবার, পিএস ও এপিএসের নির্দেশনা মোতাবেক ট্রলি ব্যাগ ক্রয়, হজযাত্রী পাঠানো ও ওমরা পালন সংক্রান্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করায় হজ ব্যবস্থাপনায় চরম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা ও ব্যাপক জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া হজের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সংসদীয় কমিটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়ার সময় সরেজমিন পরির্দশন করার কথা থাকলেও তা করেনি সংসদীয় কমিটি। ভান্ডারী বাড়িটি সরেজমিন দেখতে চাইলে যুগ্মসচিব (হজ) জাহাঙ্গীর আলম, মন্ত্রীর পিএস, এপিএসের ইঙ্গিতে বাড়ির মালিক শুধুমাত্র মন্ত্রীকে নিয়ে যান। কিন্তু হাজিদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ভান্ডারী তাদের পেছন পেছন গিয়ে দেখেন সেটি একটি বি গ্রেডের হোটেল। অথচ প্রধানমন্ত্রীকে এ গ্রেডের বাড়ির কথা জানানো হয়। পরবর্তীতে তিনি মদিনায় গেলে সেলিম নামে এক মালিক মদিনায় গিয়ে মাইজভান্ডারীকে বাড়ি ভাড়া নেয়ার জন্য চাপ দেন। তিনি এক পর্যায়ে তিন লাখ রিয়াল ঘুষ গ্রহণের প্রস্তাব করেন। মন্ত্রী তাকে পাঠিয়েছেন বলেও জানান বাড়ির মালিক।
পরে মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সেলিম নামের ওই ব্যক্তি আহসান উল্লাহ মাস্টারের আত্মীয়। এরপরও যুগ্মসচিব ও মন্ত্রীর পিএস বার বার চাপ দেন ওই বাড়িটি ভাড়া নেওয়ার জন্য। এসময় ধর্ম বিষয়ক সাবেক সচিব জানান, মন্ত্রীর নির্দেশে হাবকে ট্রলি কেনার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
পরে কমিটির সদস্য একেএমএ আউয়াল (সাইদুর রহমান) এসব বিষয়ে একমত পোষণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এসব নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যক্রমকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংসদীয় কমিটির সভাপতিকে অনুরোধ জানান। কিন্তু গত বৈঠকে মন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় মঙ্গলবারের বৈঠকে মন্ত্রীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চান কমিটির সভাপতি।
মন্ত্রী বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখা হোক। পরে কমিটির সভাপতি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলে মাইজভান্ডারী তার সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে মিলেমিশে কাজ করার আহ্বান জানান। এখানেই ভেস্তে যায় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ।
বৈঠকে হজের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে পর্যালোচনা করা হয় এবং ২০১৬ সালের হজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালনের জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটি একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
বৈঠকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মো. বাবুল হাসান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এইচএস/একে/এমএএস/আরআইপি