‘আমরা সৌভাগ্যবান, অনেক দেশের ক্রুরা এখনো আটকে আছেন’
সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিক। একই সঙ্গে সহকর্মী ও জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানান তারা।
ওই জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম বলেন, অনেক বড় দেশের ক্রুরা (নাবিক) সেখানে আটকা আছেন। তারা এখন পর্যন্ত উদ্ধার হননি। আমাদের বাংলাদেশ খুব ছোট দেশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কূটনীতিকরা অনেক পরিশ্রম ও চেষ্টা করে আমাদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন।
বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে তার্কিশ এয়ারের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরার পর এসব কথা বলেন তিনি।
জি এম নূরে আলম বলেন, আমরা সবাই আনন্দিত সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পেরেছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও অস্ট্রিয়ার দূতাবাস কঠোর পরিশ্রম করেছে। ফলে আমরা এত দ্রুত দেশে ফিরতে পেরেছি। এটা ছিল আমাদের জন্য অকল্পনীয়।
একই সঙ্গে অত্যন্ত গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি আমাদের সহকর্মী ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের মৃত্যুতে। তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা তার মরদেহ হিমঘরে রেখে এসেছি- যোগ করেন জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন।
ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে হামলার বিষয়ে জি এম নূরে আলম বলেন, আমরা নিয়মিত ডিউটিতে ছিলাম। বিকেলে যখন হামলা হয় তখন জাহাজের ব্রিজে আগুন লেগে যায়। এরপর আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি।
তিনি বলেন, দেশবাসী আমাদের জন্য অনেক দোয়া করেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। তিনি বিভিন্ন পরামর্শ ও সাহস দিয়েছেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফোন করে আমাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেন।
নূরে আলম আরও বলেন, আমরা সেখানে দেখেছি প্রায় ৬০ কিলোমিটার হেঁটে রিফিউজিরা সীমান্ত অতিক্রম করছে। কিন্তু আমাদের হেঁটে পার হতে হয়নি।
যেদিন থেকে যুদ্ধ শুরু হয় সেদিন সকাল থেকেই চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না বলেও জানান জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী দেশে ফেরা ২৮ নাবিক হলেন- জি এম নূর ই আলম, মো. মনসুরুল ইসলাম খান, সেলিম মিয়া, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, মো. রোকনুজ্জামান রাজীব, ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ফয়সাল আহমেদ সেতু, মো. ওমর ফারুক, সৈয়দ আশিফুল ইসলাম, রাজীবুল আউয়াল, সালমান সরওয়ার সামি, ফারজানা ইসলাম মৌ, মো. শেখ সাদী, মো. মাসুদুর রহমান, মো. জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আমিনুর ইসলাম, মো. মোহিন উদ্দিন, হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম, সারওয়ার হোসাইন, মো. মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, মো. আতিকুর রহমান, মো. শফিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
এর আগে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ২টায় ২৮ নাবিককে নিয়ে দেশের পথে উড়াল দেয় বিমানটি। রাতেই বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসাইন জানিয়েছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ট্রানজিট হয়ে বুধবার দুপুরে ২৮ নাবিককে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
এদিকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনে রাখা বিধ্বস্ত জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহও দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ডেনিশ কোম্পানি ডেল্টা করপোরেশনের অধীনে ভাড়ায় চলছিল। মুম্বাই থেকে তুরস্ক হয়ে জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে নোঙর করে। ওলভিয়া থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল জাহাজটির।
এরই মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে ২৯ জন ক্রু নিয়ে ওলভিয়া বন্দরে আটকাপড়ে জাহাজটি। পরবর্তী সময়ে গত ২ মার্চ রকেট হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন। তবে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় হাদিসুরের মরদেহসহ জীবিত ২৮ জনকে ৩ মার্চ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
গত শনিবার (৫ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দর সংলগ্ন বাংকার (শেল্টার হাউস) থেকে বেরিয়ে মালদোভার পথে যাত্রা করেন ওই ২৮ নাবিক। সবশেষ গত রোববার (৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তারা ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে মালদোভা হয়ে দুপুরের পর রোমানিয়া পৌঁছান।
টিটি/কেএসআর/জিকেএস