সাঈদীর ফাঁসি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ


প্রকাশিত: ০৯:৪২ এএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৬

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি চেয়ে আপিলের রায়ে রিভিউ আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সাঈদীর আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ-এর জন্য আবেদন করা হয়।

আপিলের রায় পুনর্বিবেচনায় রিভিউতে মূল ৩০ পৃষ্ঠার সঙ্গে ৬৫৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দিয়েছেন আইনজীবী মাহবুবুর রহমান।

এদিকে, সাঈদীর খালাস চেয়ে রিভিউ করবেন কিনা জানাননি তার আইনজীবীরা। তবে জানা গেছে, খালাস চেয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবদন (রিভিউ) করার আগ্রহ প্রকাশ করেনি আসামিপক্ষ।

এ বিষয়ে সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান বলেন, ‘আমরা রিভিউ করতে চাই না। রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ করলে এরপরই আবেদন করা হবে।’

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, ‘সাঈদীর রায় পর্যালোচনা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা হবে। রিভিউতে সাঈদীর ফাঁসি চাওয়া হয়।’

এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর সাঈদীর রায় প্রদানকারী পাঁচ বিচারপতির স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬১৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা যাবে। সে হিসেবে আগামী ১৫ জানুয়ারি সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার শেষ দিন।

গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন। অন্য চার বিচারপতি হলেন- সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠিত ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়।

এই মামলায় আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল রায় অপেক্ষমাণ রাখেন আপিল বিভাগ। এর ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা করা হয়।

আপিল বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি রায় দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কেবল সাঈদীর ক্ষেত্রেই রিভিউ বাকি রয়েছে।

বাকি চার মামলায় জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ খারিজ হয়ে যাওয়ায় তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড দেয়া হয়। যাবজ্জীবন বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত’ কারাবাস বোঝাবে বলে ব্যাখ্যা দেন আদালত।

এছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।

এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।

এফএইচ/একে/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।