রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পোশাকশিল্পে, অফডকে আটকা ১৬৬ কন্টেইনার
ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরুর প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর প্রভাব দৃশ্যমান। জ্বালানি, তেল, গ্যাসসহ অনেক ক্ষেত্রেই পড়েছে রুশ অভিযানের প্রভাব। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাকশিল্পেও এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বড় বড় শিপিং কোম্পানিগুলো রাশিয়ায় পণ্য পরিবহন বন্ধ ঘোষণার প্রভাবে চট্টগ্রামের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে (অফডক) আটকা পড়ছে রপ্তানির পোশাক।
গত কয়েকদিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন কারখানা থেকে রপ্তানির জন্য আসা ১৬৬ কন্টেইনার তৈরি পোশাক অফডকগুলোতে আটকা পড়ে। এগুলোর শিপমেন্ট নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
গার্মেন্টস ও শিপিং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেরিয়েন শিপিং কোম্পানি, মার্সক, হ্যাপাগ লয়েড এবং ওয়ান লাইন গত ১ মার্চ থেকে রাশিয়ায় পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেয়। অন্য শিপিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা এখনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি তারাও পণ্য বুকিং নিচ্ছে না। তাছাড়া সুইফটে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণেও পণ্য পরিবহন বিল পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়াতে অনেক শিপিং কোম্পানি এখন রাশিয়া-ইউক্রেনগামী পণ্য বুকিং নিতে চাইছে না।
করোনাকালে পোশাক রপ্তানি ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল/ফাইল ছবি
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সরওয়ার জাগো নিউজকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্পেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকখাতেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় বড় শিপিং কোম্পানিগুলো রাশিয়ায় পণ্য বুকিং নিচ্ছে না। আবার যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ইউক্রেনেও পণ্য যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এ যুদ্ধ সহসা শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আবার যেভাবে একে একে নিষেধাজ্ঞা আসছে, যুদ্ধ শেষ হলেও এগুলো কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। এ কারণে এরই মধ্যে রপ্তানির জন্য আসা অনেক পোশাক চট্টগ্রামের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে আটকা পড়েছে। এগুলোর শিপমেন্ট নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
জাতীয় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই হতে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে রাশিয়ায় ৪২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা দেশের মোট পোশাক রপ্তানির দুই শতাংশের কম। একই সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ দুই হাজার ৩৯৯ কোটি ডলার আয় করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ১১৪ কোটি ডলারের বাণিজ্য করেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাকখাত থেকে এসেছে ৫৯ কোটি ডলার।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, শিপিং লাইনগুলো তাদের পেমেন্ট নিশ্চয়তা চাইছে। আবার পণ্য নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেনের বন্দরে গেলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খালাস হবে কি না তা নিয়েও মেইন লাইন কেরিয়ারগুলোর মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এতে তাদের পোর্ট ডেমারেজের আশঙ্কা রয়েছে। মূলত কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তারা বিষয়টি কিছুদিনের জন্য ওয়াচ (পর্যবেক্ষণ) করছে।
তিনি বলেন, সুইফট’র নিষেধাজ্ঞার কারণে শিপিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরি হওয়াতে তারা আগামী কয়েকটা দিন পণ্য বুকিং স্লো (ধীর) করে দিয়েছে। কিন্তু বায়াররা আমাদের পণ্য নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। তারাও (বায়ার) বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বাংলাদেশ কন্টেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন (বিকডা) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৯টি কন্টেইনার ডিপোতে রাশিয়াগামী রপ্তানিপণ্যের বেশ কয়েকটি চালান আটকে আছে। রোববার (৬ মার্চ) পর্যন্ত ৯টি ডিপোতে রপ্তানির ১৬৬ কন্টেইনার পণ্য আটকা আছে। দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা থেকে রপ্তানির এসব পণ্য ডিপোগুলোতে এসেছে।
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে পোশাক রপ্তানিতে সংকট বাড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার রোববার সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, ৯টি ডিপোতে মাত্র ১৬৬ কন্টেইনার পণ্য আটকা রয়েছে। শিপিং কোম্পানিগুলো বুকিং না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার আগেই রাশিয়াতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে এসব পণ্য ডিপোগুলোতে এসেছিল। বুকিং বন্ধ ঘোষণার পর গার্মেন্টস কোম্পানিগুলোও আর পণ্য পাঠাচ্ছে না। আপাতত এসব পণ্য তাদের কারখানায় রাখছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর থেকে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। যুদ্ধে এরই মধ্যে দুই দেশের সৈন্যদের পাশাপাশি অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
এদিকে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ, ইরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বিভিন্ন দেশ।
ইএ/জিকেএস