উঠলেই দুলতে থাকে
নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের আফরা নদীর উপর তৈরি বাঁশের সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কা এলাকাবাসীর। সংস্কারের অভাবে সেতুটির অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। সেতুর উপর একজন মানুষ উঠলেই দুলতে থাকে।
কাঠের পাটাতন ও বাঁশের লম্বা বাতার ভাঙা অংশে পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবুও এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লোক পার হচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানান, তিন বছর আগে (২০১২ সালে) সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের আফরা এলাকার বুড়ি ভৈরব নদীর ওপর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ওরফে মাসুম গাজী বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ২০ ফুট চওড়া সেতুটি নির্মাণ করেন। সেই থেকে এলাকার মানুষ এটিকে চেয়ারম্যান সেতু হিসেবে মনে করে আসছে। সেতুটি নির্মাণের পর শেখহাটি ইউনিয়নের আটটি এবং যশোরের বসুন্দিয়া ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে।
আফরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন,চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেতুটি নির্মাণ করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এভাবে যদি জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসতেন তাহলে আমাদের সমাজের অনেক সমস্যার সমাধান হতো। সেতুটি শুধু শেখহাটি ও বসুন্দিযা ইউনিয়নবাসীরই নয়-নড়াইল সদর, যশোর সদর ও অভয়নগর উপজেলার জনসাধারণের যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুর ওপর দিয়ে লোকজন ভয় নিয়ে চলাচল করছে। সেতুর কাঠ এবং বাঁশের পাটাতনের বিভিন্ন স্থান ভেঙে গেছে। হেলে পড়েছে কংক্রিটের একটি পিলার। লোকজন উঠলেই সেতুটি দুলতে শুরু করে। সেতুটির কাঠ ও বাঁশ নড়বড়ে হওয়ায় চেয়ারম্যান কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই পাটাতনের বিভিন্ন স্থান সংস্কার করছেন।
আফরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী লুবনা ইয়াসমিন জানায়, আগে স্কুলে যেতে দুটি নৌকা পার হতে হতো। চেয়ারম্যান এই সেতুটি করে দেওয়ায় এখন আর কোনো নদী পার হতে হয় না।
শেখহাটি ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম গাজী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষ নদী পারাপারে দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছেন। শেখহাটি এলাকার অনেক শ্রমিককে পাশের যশোর নওয়াপাড়া ও বসুন্দিয়া এলাকায় শিল্পকারখানায় কাজ করে অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। সেতুটি নির্মিত হওয়ায় এখন থেকে তাদের আর নৌকার অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, তিন বছর আগে দুই লাখ টাকা খরচ করে প্রথমে কাঠ ও বাঁশের খুটি দিয়ে পাটাতনের মতো করা হয়। পরে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করে কয়েকটি আরসিসি পিলার বসিয়েছি। কিন্তু পাটাতনের বাঁশ ও কাঠ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পথচারীদের যাতায়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নড়াইল অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তাকে সেতুটি মেরামতের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
নড়াইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোতালেব বিশ্বাস বলেন, আগে ইউপি চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। নিজের অর্থায়নে এ ধরনের একটি সুন্দর কাজ করার জন্য।
তিনি বলেন, বুড়ি ভৈরব নদের ওপর সেতুটি অত্যন্ত জনগুরত্বপূর্ণ বিধায় গত বছর সশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেতুটি নির্মাণে কোনো বাধাই থাকবে না।
হাফিজুল নিলু/এমএএস/আরআইপি