ভিসা ছাড়াই ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত। ছবি: সংগৃহীত

অডিও শুনুন

রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ছাড়া সীমান্ত খুলে দিয়েছে পোল্যান্ড।

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পোল্যান্ডের ওয়ারশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তিটি শেয়ার করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ছাড়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্র বৈধ পাসপোর্টধারীরা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাসপোর্ট প্রদর্শন করে পোল্যান্ডে ঢুকতে পারবেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, যাদের পাসপোর্ট নেই, তারা ট্রাভেল পাস নিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকতে পারবেন। প্রত্যেক বাংলাদেশিকে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি সঙ্গে রাখতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। ওয়ারশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি দল আগামীকাল সকালে পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তের পথে রওনা হবে। ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে ঢুকতে ইচ্ছুক বাংলাদেশীদের তারা সহায়তা প্রদান করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউক্রেনের ভেতরে বিচ্ছিন্ন বোমা বিস্ফোরণ, পেট্রোল অপ্রতুলতা এবং পথিমধ্যে অতিরিক্ত ট্রাফিক জ্যামের কারণে এ মুহূর্তে ওই বর্ডারের দূরবর্তী এলাকায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সীমান্তের দিকে রওনা হতে হলে পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে রওনা দিতে অনুরোধ করা যাচ্ছে ।

বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে এবং প্রয়োজনে পোল্যান্ডে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে বাংলাদেশ সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় বজায় রেখেছে। আটকেপড়া বাংলাদেশিদের অবিলম্বে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে সরকার।

jagonews24রাশিয়ার হামলার পরপরই ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রতিরোধযুদ্ধের প্রস্তুতি। ছবি: সংগৃহীত

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য এরই মধ্যে ওয়ারশতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে অতিরিক্ত জনবল দিয়ে শক্তিশালী করা হয়েছে। সব ধরনের কনস্যুলার সহায়তা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ভোরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। এরপরই জল-স্থল ও আকাশপথে ইউক্রেনের ওপর ত্রিমুখী হামলা চালায় রুশ সামরিক বাহিনী। প্রথম দিনই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায় রুশ সেনারা। নিয়ন্ত্রণে নেয় কিয়েভের অ্যান্টোনোভ বিমানবন্দর ও দেশটির ঐতিহাসিক চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিয়েভের সামরিক সদর দপ্তরের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর মিসাইল কমান্ড সেন্টারগুলোতে রুশ সেনারা দিনভর হামলা চালায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী জল-স্থল ও আকাশপথে ইউক্রেনে ভয়াবহ হামলা চলাচ্ছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চেরনিহিভ, খারকিভ ও লুহানস্ক সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রুশ সৈন্য স্থলপথে কিয়েভের দিকে এগোচ্ছে

রুশ হামলার প্রথম দিনে ইউক্রেনের অন্তত ১৩৭ জন সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এছাড়া রাশিয়ার ৫০ সেনাকে হত্যা, পাঁচটি ট্যাংক ধ্বংস ও ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন সেনারা।

এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির দ্বিতীয় দিনেও রুশ সেনাদের সঙ্গে ইউক্রেন সেনাদের তীব্র লড়াই চলছে। সিএনএন-এর খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী কিয়েভ থেকে ২০ মাইলের মধ্যে রুশ সেনারা অবস্থান নিয়েছে। কিয়েভের বেশ কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পরিস্থিতি যাই হোক, তিনি আত্মগোপনে যাবেন না। থাকবেন রাজধানী কিয়েভেই।

এদিকে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার মুখে ইউক্রেনকে একা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনকে রক্ষায় আমাদের পাশে থেকে কারা লড়াই করতে প্রস্তুত? আমি কাউকেই দেখতে পাই না। সবাই আমাদের একা ছেড়ে গেছে। ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার নিশ্চয়তা ইউক্রেনকে কে দেবে? সবাই ভীত।’

‘ইউক্রেনকে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য করতে আমি ২৭ জন ইউরোপীয় নেতাকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউই কোনো উত্তর দেয়নি’- বলেন জেলেনস্কি।

রুশ বাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা (রাশিয়ার সৈন্যরা) মানুষকে হত্যা করছে এবং শান্তিপূর্ণ শহরগুলোকে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এটা লজ্জাজনক। কখনোই তারা ক্ষমা পাবে না।’

এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।