এসআই মাসুদের খুঁটির জোর কোথায়?


প্রকাশিত: ০৫:১০ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু। জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেন বলেই জনগণের বন্ধু হিসেবেই তারা প্রতিভাত। কিন্তু সেই রক্ষকই যখন ভক্ষক হয়ে উঠেন তখন শুধু নিয়মের ব্যত্যয়ই ঘটে না একটি আইনানুগ সুশৃঙ্খল বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্যও তা বিরাট সংকট হয়ে দেখা দেয়। অনেকগুলো শব্দের (P - Polite, O - Obedient, L - Loyel, I - Inteligent, C - Courageous, E - Efficient)  সমাহার হচ্ছে পুলিশ। যার সবগুলোই গুণবাচক। এই গুণবাচক শব্দের ধারক ও বাহক পুলিশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বেতন খেয়ে, সরকারি পোশাক গায়ে দিয়ে যখন সেই দেশের মালিক জনসাধারণের নিরাপত্তার বদলে হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তখন  তা গভীর উদ্বেগের জন্ম দেয়। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের এসআই মাসুদকে কী আমরা পুলিশ বলবো? তাহলে তার মধ্যে পুলিশের গুণগুলো থাকা দরকার। এক্ষেত্রে বলতে হবে ‘সকলেই পুলিশ নয়, কেউ কেউ পুলিশ।’

গণমাধ্যমের কল্যাণে এসআই মাসুদের কীর্তির কথা ইতিমধ্যেই চাউর হয়েছে। ঘটনা তেমন কিছু না। কিন্তু পুলিশে ছুঁলে ১৮ ঘা বলে একটা কথা আছে। সে জন্যই একজন নিপাট ভদ্রলোককে হেনস্তা হতে হয়েছে তার হাতে। মারধরের শিকার গোলাম রাব্বী বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা। তিনি এক সময় সংবাদ পাঠক হিসেবেও কাজ করতেন।

গোলাম রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনা তার জবানিতেই শোনা যাক-“ শনিবার রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্প হয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। বিহারী ক্যাম্পের সামনে পুলিশ আমাকে বাধা দেয়। ‘নেশা জাতীয় দ্রব্য কাছে আছে’ এই বলে আমাকে কোনো কিছু না বলেই তল্লাশির চেষ্টা চালায় তারা। আর বারবার বলছিল কোথায় আছে ইয়াবা, নেশা জাতীয় দ্রব্য বা অস্ত্র-সরঞ্জাম জাতীয় কিছু...। এরপর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শুরু হয় লাঠি-রাইফেলের বাট দিয়ে গুতানো, এক এক করে পোশাক খোলা আর আজেবাজে বকাবকি করে।’

পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজনের নাম মাসুদ রানা। তিনি মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাকিরা তাদের নেইম প্লেট খুলে ফেলায় তাদের নাম জানা যায়নি।

এসআই মাসুদ অবশ্য নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার সময় তার (গোলাম রাব্বীর) চলাফেরায় সন্দেহ হয়। এ সময়  তল্লাশী করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। পরে তাকে থানায় নিতে চাইলে তিনি বাকবিতণ্ডায় জড়ান। মারধরের অভিযোগও অস্বীকার করেন এসআই মাসুদ।

কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। কিন্তু গালিগালাজ, হুমকি ধমকি কী জন্য। অন্য উদ্দেশ্য ছাড়া তো এর কোনো কারণ নেই। ব্যাংক কর্মকর্তা তার পরিচয় দেওয়ার পরও উল্টো পুলিশ গালিগালাজ বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্রসফায়ারের ভয়ও দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাংকার পেটানো মাসুদের দম্ভোক্তির হেতু কি। তার খুঁটির জোর কোথায়? পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে , কিন্তু পুলিশ কি আইনের উর্ধ্বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাকে পেটালো পুলিশ- গণমাধ্যমে এই ধরনের শিরোনাম কি পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে? রাব্বীকে পেটানোর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে সেই সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো সম্ভব নয়। তাই এসআই মাসুদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের পুলিশ কর্মকর্তার জন্য গোটা পুলিশ বাহিনীর বদনাম হবে এটা হতে পারে না।

পুলিশ বাহিনী এখন অনেক আধুনিক ও দক্ষ হয়েছে। আমরা মানবিক পুলিশের অনেক স্টোরিও দেখতে পাই গণমাধ্যমে। সেখানে এসআই মাসুদরা বড়ই বেমানান।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।