বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাকে পেটাল পুলিশ
পুলিশকে চাঁদা না দেয়ায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সহকারী কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল (শনিবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প এলাকা থেকে আসাদ গেইট পর্যন্ত হয়রানির শিকার হন তিনি। পরে রেডিও ধ্বনির সাংবাদিক জাহিদ হাসানসহ তিনজন খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
মারধরের শিকার গোলাম রাব্বী বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। জাগো নিউজের চাকরির পাতায়ও নিয়মিত লেখেন তিনি। পুলিশী হয়রানির শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্র একসময় সময় টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন।
গোলাম রাব্বী বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে মোহাম্মদপুুরের বিহারী ক্যাম্প হয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। বিহারী ক্যাম্পের সামনে পুলিশ আমাকে বাধা দেয়। ‘নেশা জাতীয় দ্রব্য কাছে আছে’ এই বলে আমাকে কোনো কিছু না বলেই তল্লাশির চেষ্টা চালায় তারা। আর বারবার বলছিল কোথায় আছে ইয়াবা, নেশা জাতীয় দ্রব্য বা অস্ত্র-সরঞ্জাম জাতীয় কিছু...। এরপর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শুরু হয় লাঠি-রাইফেলের বাট দিয়ে গুতানো, এক এক করে পোশাক খোলা আর আজেবাজে বকাবকি করে।
“বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী কর্মকর্তার পরিচয় দিয়েও রেহাই মেলেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, বিসিএস ক্যাডার, পুলিশেরই এসপি পরিচয় দেয়া ভাই থেকে শুরু করে সবারই পরিচয়ও দিয়েছি। শেষমেষ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতির নামও বলেছি। কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। মারধর করেছে। টাকা চেয়েছে। মূলত: টাকা দিতে না পারার কারণেই বেশি করে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন গোলাম রাব্বী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একজনের নাম মাসুদ রানা। তিনি মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাকিরা তাদের নেইম প্লেট খুলে ফেলায় তাদের নাম জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে এসআই মাসুদের পাল্টা অভিযোগ, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার সময় তার চলাফেরায় সন্দেহ হয়। এ সময় তল্লাশী করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। পরে তাকে থানায় নিতে চাইলে তিনি বাকবিতণ্ডায় জড়ান। মারধরের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।
রেডিও ধ্বনির সাংবাদিক জাহিদ হাসান জানান, রাব্বীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ও আমাকে জানিয়েছে, রাস্তায় কয়েকজন লোক শার্টের কলার ঝাপটে ধরে টেনে হেচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ‘পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওরা বলছিল ‘স্যারের সঙ্গে কথা আছে চল’ বলেই পেছনে দাঁড়ানো চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য দৌড়ে এসে টেনে-হিঁচড়ে পিকাআপ ভ্যানে তোলার চেষ্টা করে।
এসময় তারা গোলাম রাব্বীকে উদ্দেশ্য করে বলেছে ‘মাল কঠিন, শেষ করে দাও’; ‘জিনিস কঠিন, ফেলে দাও’! এরপর বিহারী ক্যাম্পসহ বেশ কিছু জায়গায় ভ্যানে করে তাকে ঘুরিয়ে আসাদ গেইটে নিয়ে আসে।
খবর পেয়ে আমিসহ তিনজন আসাদ গেইট যাই। আমাদের দেখে ওরা পিকাআপ ভ্যান আবারো টান দেয়। আড়ং থেকে আসাদ গেইট এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে পুলিশ ভ্যান। এরপর উদ্ধার করতে গেলে রাব্বীর কাছে গাঁজা, হিরোইন পাওয়া গেছে বলে দাবি করে। এক পর্যায়ে আবার বলে সে বিহারী ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে তাকে তল্লাশি করতে চাইলে সে দেয়নি। বিভিন্ন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাত ১টার দিকে ছেড়ে দেয়।
জাহিদ হাসান বলেন, পুলিশ সদস্যরা যখন আমাদের বলছে তার কাছে গাঁজা, হিরোইনসহ বিভিন্ন জিনিস পাওয়া গেছে। তখন আমরা বলছি তাহলে আপনারা মামলা করেন। তাকে থানায় নিয়ে চলেন। কিন্তু তারা থানায় না নিয়ে আমাদের কাছে আসাদ গেইটেই তাকে ছেড়ে দেয়।
এ ব্যাপারে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন গোলাম রাব্বী।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টি ওয়াকিবহাল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্ত এসআইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী গোলাম রাব্বী ডিসি বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
জেইউ/জেডএইচ/আরআইপি