বিশ্বশান্তি ও ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে আখেরি মোনাজাত শেষ
বিশ্বশান্তি ও ব্যক্তিগত সব পাপের ক্ষমা চেয়ে শেষ হল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত রোববার বেলা ১১টা ৭ মিনিটে শুরু হয়ে, শেষ হয় ১১টা ৩৩ মিনিটে।
মোনাজাতে অংশ নিয়ে পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার রহমত ও ক্ষমা চেয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ইসলামের দাওয়াত সবার মধ্যে পৌছে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় মোনাজাতে। কবর ও জাহান্নামের আজাব থেকেও মুক্তি চাওয়া হয়।
বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষভাবে স্থাপিত মোনাজাত মঞ্চ থেকে এ মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলিগ জামাতের মারকাজের শূরা সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ সাদ। আর এই মোনাজাতকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতিতে এবাদত, বন্দেগী, জিকির, আসকার আর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে উত্তাল কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান মুখরিত হয়ে উঠে।
মোনাজাতে বিশ্বশান্তি ছাড়াও দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য কামনা করা হয়। আরবি ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন মুসল্লিরা। এ সময় `আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন` ধ্বনিতে তুরাগ তীর মুখরিত করে দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় আকুতি জানান তারা।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আজ ভোর থেকে লাখো মুসল্লি টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হন। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা সেখানে যান। টঙ্গী শহর, ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। যত দূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। তারা মুরব্বিদের বয়ান শোনেন।
ময়দান ভরে যাওয়ায় আশেপাশের অলিগলি ও রাস্তায় পাটি, খবরের কাগজ, পলিথিন বিছিয়ে তাতেই অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। ওই এলাকার কয়েক কিলোমিটার জুড়ে প্রায় সবগুলো ভবনের ছাদে ঠাঁই নেন অনেকে।
সাভারের ব্যাংক কলোনি থেকে আসা কবির সরকার বলেন, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে তিনি রাত ৩টার সময় ইজতেমা ময়দানে এসেছেন।
মুসল্লিরা বলছেন, ইজতেমায় অংশ নিয়ে তারা দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবতার জন্য দোয়া করেন। ইজতেমার শিক্ষা তারা ছড়িয়ে দেবেন। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে তা কাজে লাগাবেন।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, সব ধরনের নাশকতার বিষয় বিবেচনায় রেখে ইজতেমা ময়দানে এবার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, মুসল্লিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত আছেন। তারা মুসল্লিদের ঘরে ফেরা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রায় দুই দশক ধরে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেছেন ভারতের প্রখ্যাত আলেম ও বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা জোবায়েরুল হাসান। তিনি দুই বছর আগে মারা যান। এর পরের বছরের মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের আরেক শীর্ষস্থানীয় তাবলিগ মুরব্বি মাওলানা সা’দ। এবারও তিনিই মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাতের আগে হেদায়েতি বয়ান করেন তিনি।
গত ৮ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়। আগামী ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে তিন দিন পর শেষ হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বার্ষিক এই সম্মেলন। ১৭ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
এইচএস/এআরএস