সড়কে নিরাপত্তা কতোদূর?


প্রকাশিত: ০৪:৫৩ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশের অঙ্গীকার ছিল সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে দুর্ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ২৪ জন। গতকাল বঙ্গবন্ধু সেতুসহ আরও কয়েকটি স্থানে দুর্ঘটনায় মন্ত্রীর ছেলেসহ মারা গেছে ১৭জন। এভাবে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। এতে অসংখ্য জীবন যাচ্ছে। প্রতিকারহীনভাবেই চলছে এই দুর্ঘটনা নামক ‘হত্যাযজ্ঞ’। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশাও দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

শনিবার বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে ২০১৫ সালের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে যে চিত্র উঠে এসেছে সেটি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সারা দেশে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৪২ জন। আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। এতে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ৫ হাজার ৯২৮টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৮৯ জন। আর আহত হয়েছিলেন ১৭ হাজার ৫২৪ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়।

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ফুটপাত দখল, ওভারটেকিং, ওভারস্পিড ও ওভারলোড, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, গাড়ির ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ক্রসিংয়ে জেব্রা ক্রসিং না থাকা এবং জেব্রা ক্রসিং গাড়িচালক কর্তৃক না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করা, মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যান একই সঙ্গে চলাচল, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো এবং মহাসড়ক ক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে যাওয়াই দায়ী।  দুর্ঘটনা রোধে এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
 
এখন শীত মৌসুম। ঘন-কুয়াশার কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। বঙ্গবন্ধু সেতুর দুর্ঘটনার জন্য কুয়াশাকেই দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু ঘন কুয়াশায় ১০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে গাড়ী না চালানোর নির্দেশ রয়েছে। এটি কেউ মানছে না। তাছাড়া লাইটও বন্ধ ছিল। কুয়াশার সময় বাতি যাতে জ্বলে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা জরুরি। দুর্ঘটনা রোধে চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। যানবাহনের উচ্চগতি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ছাড়া রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে। যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যাবে না। ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করে পথচারী চলার উপযোগী করতে হবে। তুলে দিতে হবে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। রাস্তা চলাচলে আইন অমান্যের জন্য আরও কঠিন শাস্তি ও জরিমানা আদায় করতে হবে। তাছাড়া রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাথ দখল করে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা, একই রাস্তায় নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, চালকের মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু ও সমন্বিত পদক্ষেপে দেশ দুর্ঘটনামুক্ত হবে এ প্রত্যাশা সকলের। দেশের মানুষ সড়কে নিরাপত্তা চায়। তারা এ ধরনের করুণ মৃত্যু আর দেখতে চায় না।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।