বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্বোধন জটিলতা
নিজস্ব ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর প্রায় দুই বছরেও উদ্বোধন হয়নি টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বিটেক)। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালু হলেও এখনো উদ্বোধনের খবর নেই।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উচ্চতর ডিগ্রি (বিএসসি-ইন-টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং) গ্রহণের সুবিধার্থে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছর মেয়াদি কোর্সটি চালু করে।
অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ‘টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’ এ ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল টেকনোলজি (বিআইটিটি)’ নাম দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে বিআইটিটি নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বিটেক)’ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ক্যাম্পাসের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পার্শ্বে বিটেকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আরো জানা গেছে, প্রায় দুই বছর ধরে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলার পর ২০১৩ সালের অক্টোবরে উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত হয়। তখন শিক্ষার্থীরা টাঙ্গাইল শহরে ছাত্রাবাস ছেড়ে দিয়ে কালিহাতীতে ছাত্রাবাস ভাড়া করে। কিন্তু সেই তারিখে উদ্বোধন আর করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এইজন্যে উদ্বোধনের নেমপ্লেটও লাগানো হয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীরা কালিহাতীতে ভাড়া করা ছাত্রাবাস ছেড়ে দিয়ে আবার টাঙ্গাইল শহরে ছাত্রাবাস ভাড়া করে।
ঘটনার দেড় মাস পরে আবার উদ্বোধনের তারিখ দেয়া হয়। এইবারও শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাস ভাড়া করে বিড়ম্বনায় পড়ে। এই তারিখেও উদ্বোধন না হয়ে প্রশাসনের তরফে বলা হয় খুব শিগগিরই উদ্বোধন হবে। এদিকে তখন কালিহাতীতে ভালো ছাত্রাবাসের অপর্যাপ্ততা থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই টাঙ্গাইল শহরে ছাত্রাবাসের পাশাপাশি কালিহাতীতেও ছাত্রাবাস রেখে দুই জায়গাতেই ভাড়া গুনতে থাকেন। এরপর শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা।
এইভাবে প্রায় দুইমাস ধৈর্য্য ধরে উদ্বোধনের এই অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি এবং শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে ক্লাশ চালু ও স্থায়ী হওয়ার দাবিতে ২০১৪`র ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনে নামেন। পরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে উদ্বোধন ব্যতিরেখেই প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চালু করার নির্দেশ প্রদান করে। এরপর প্রায় দুই বছর পার হতে চললেও উদ্বোধনের আভাস আর পাওয়া যায়নি। উদ্বোধন এখনো না হওয়াতে শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বিটেক ৬ষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী অমিত সাহা জানান, ‘নিজস্ব ক্যাম্পাসে আসার পর বিটেক ৪র্থ ব্যাচ বের হয়েছে এবং ৫ম ব্যাচও বের হওয়ার অপেক্ষায়। আমরা উদ্বোধন দেখে বের হতে পারবো কিনা সন্দেহ হচ্ছে।’ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন উদ্বোধন না হওয়াতে তারা অনেক সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং দেশের খুব কম মানুষই এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারছেন।
উদ্বোধন বিষয়ে জানতে চাইলে বিটেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জি. ড. মো. আতাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেও চাচ্ছি প্রতিষ্ঠানটি তাড়াতাড়ি উদ্বোধন হোক। উদ্বোধন জটিলতা নিরসনে বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।’
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণে শিক্ষক ও কর্মকর্তা থাকার কথা তার অর্ধেকও নেই বিটেকে। দক্ষ অপারেটরের অভাবে ল্যাবে টেক্সটাইল মেশিনারিজগুলো রান করা যাচ্ছে না। লাইব্রেরি সুবিধা, উন্নত ইন্টারনেট সুবিধা, আবাসিক হলগুলোতে ডাইনিং সংক্রান্ত সুবিধা, ক্যান্টিন সুবিধা, গ্যাস সংযোগ, আবাসন সুবিধা, নিজস্ব পরিবহন সুবিধাসহ আরও আনুসঙ্গিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিও চলছে কচ্ছপ গতিতে।
একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উদ্বোধন না হওয়াতে বাজেটের স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় মেশিনারিজগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ চালু করা যাচ্ছে না। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। খুব শিগগিরই যেন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি উদ্বোধন হয় এজন্যে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিএ