মিথ্যা ঘোষণায় আসছে অ্যান্টিবায়োটিকের কাঁচামাল
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আসছে দামি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কাঁচামাল। আমদানিকৃত কাঁচামালের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগের অভাবে এক শ্রেণির প্রতারক ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী রাজস্ব ফাঁকি দিতে প্রকৃত তথ্য গোপন করে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের দামি কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য আমদানি করছেন।
ওষুধের কাঁচামাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কোন প্রতিনিধি বন্দরে না থাকার সুযোগে বছরের পর বছর মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা পণ্যেদ্রব্যের চালান আটকের ঘটনা অতি নগণ্য।
সম্প্রতি মহাখালীর সিআইডি পুলিশের ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে চট্টগ্রাম পুলিশের জব্দকৃত পণ্যের রাসায়নিক নমুনা পরীক্ষায় সুইটনারের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের কাঁচামাল আনার অকাট্য প্রমাণ মিলেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মোট ১২৭টি নমুনার মধ্যে ৭৭টিতে অ্যান্টিবায়োটিকের কাঁচামাল পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে খবরের সত্যতা স্বীকার করেন সিআইডির ফরেনসিক কেমিক্যাল ল্যাবরেটরির প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দিলীপ কুমার সাহা। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
সরকারি ল্যাবরেটরির পাশাপাশি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে পাঠানো একই নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক কাঁচামাল থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
গত জুলাইয়ে রাজধানীর বাবুবাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সুইটনার ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা ৪০ বস্তা ও ৮৬ ড্রামে আনা পণ্যে ঘনচিনি সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দর পুলিশ জব্দ ও আদালতের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা সিআইডিসহ আরো দুটি ল্যাবরেটরিতে পাঠায়।
বন্দর থানার এসআই সঞ্জয় কুমার সাহা সিআইডি পুলিশের চট্টগ্রাম ফরেনসিক ল্যাবের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বন্দর থানার মামলা ৭ (১৩ জুলাই ২০১৫) এর বরাত দিয়ে জানান, জব্দকৃত ৪০ বস্তা ও ৮৬ ড্রামের আলামত থেকে ১২৭টি কৌটায় নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
মামলাটির সুষ্ঠু ও যথাযথ তদন্তের স্বার্থে আলামতে কোনো ঘনচিনি তথা সোডিয়াম সাইক্লামেট রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রেরিত আলামতগুলোর প্রত্যেকটির বাণিজ্যিক রাসায়নিক নাম, আলামতগুলো কি কি উপাদানে গঠিত তা জানাতে অনুরোধ জানানো হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত ১ নভেম্বর সিআইডি পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করে। সূত্র জানায়, নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষায় ৪০টি কৌটায় অ্যাসিস্যালফান পটাশিয়াম (সুইটনারজাতীয়) ও ১০টি কৌটায় বিটা কেরোটিন (ভিটামিন) ও ৭৭টি কৌটায় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের নমুনার উপস্থিতি পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে অবাধে মিথ্যা ঘোষণায় ওষুধের কাঁচামাল ও দামি ওষুধ আসছে। সেখানে তাদের কোনো কর্মকর্তা কিংবা সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি না থাকায় সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় ফাঁকি দিতে এমন বহু চালান আসলেও তা ধরা পড়ে না।
বন্দর থানার এসআই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিআইডির প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, খুব শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করবেন।
এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/এমএস