বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু
টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ (শুক্রবার) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। অর্ধশতাধিক দেশের কয়েক লাখ মুসল্লি এরই মধ্যে ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। বয়ান, কারগুজারি, তাশকিল, তালিম, তিলাওয়াত, জিকির ও সালাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আজ দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে এখানে। আশা করা হচ্ছে, পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি এ জামাতে শরিক হবেন।
বৃহস্পতিবার থেকে আসতে থাকা মুসল্লিদের ঢল শুক্রবারও অব্যাহত থাকে। শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজে লাখ লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় গাজীপুরসহ আশপাশের অঞ্চলগুলো থেকে থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করতে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করবেন।
এ বছর প্রথম পর্বে ১৭টি জেলা অংশ নেয়ায় চটের বিশাল সামিয়ানার নীচে মুসল্লিদের কোন ঠাসাঠাসি নেই। বিভিন্নস্থান থেকে আসা মুসল্লিদের অনেকে মূল প্যান্ডেলের নিচে বসেরই জুমার নামাজ আদায় করার সুযোগ পাবেন।
সকাল থেকে টঙ্গী ও এর আশপাশের লোকজন ইজতেমায় বৃহত্তর জুমার নামাজের জামাতে অংশ নিতে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির আসকার ইবাদত বন্দেগীতে টঙ্গী এখন এক পবিত্র পুণ্যভ‚মিতে পরিণত হয়।
হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ হলো এ বিশ্ব ইজতেমা। ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ইজতেমা থেকেই দাওয়াতি কাজে বের হন। ইজতেমা সূত্র জানায়, বাদ ফজর উর্দূতে আমবয়ান করেন ভারতের হযরত মাওলানা আবদুর রহমান। বয়ানটি বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের হযরত মাওলানা আব্দুল মতিন।
আজ ইজতেমা ময়দানে বৃহত্তর জুমা’র নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসিজদের খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের। বাদ আসর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ জোয়াহের। বাদ মাগরিব বয়ান করবেন দিল্লির হযরত মাওলানা মোহাম্মদ সাদ।
ইজতেমায় দুই মুসল্লির মৃত্যু
বিশ্ব ইজতেমায় এসে গত বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদ উদ্দিন কবিরাজ (৬৫) নামে এক মুসল্লি হৃদযন্তের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না নিল্লাহে--- রাজেউন)। তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার গুটিয়া মহিষবাড়ি এলাকার মাহমুদ আলী কবিরাজের ছেলে। রাতে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার নূর ইসলাম (৭২) নামে অপর এক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে বুকে ব্যাথা অনুভব করলে কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি মারা যান। রাতেই তাদের ইজতেমা ময়দানে দাফন সম্পন্ন হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরা মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোষাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা অবস্থান করছেন। জানা গেছে, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ৫টি করে স্তরে বিভক্ত হয়ে পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, নৌ-টহল, চেকপোষ্ট। দুই পর্বে প্রায় ১২ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন।
ইজতেমায় ১৭ জেলার মুসল্লি
এবারে প্রথম দফায় বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ২৭টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার মুসল্লির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ঢাকা জেলা ১ থেকে ৬ নং খিত্তায়, শেরপুর ৭নং খিত্তা, নারায়নগঞ্জ ৮ ও ১১ নং খিত্তা, নীলফামারী ৯নং খিত্তা, সিরাজগঞ্জ ১০নং খিত্তা, নাটোর ১২নং খিত্তা, গাইবান্ধা ১৩নং খিত্তা, লক্ষ্মীপুর ১৪ ও ১৫নং খিত্তা, সিলেট ১৬ ও ১৭নং খিত্তা, চট্টগ্রাম ১৮ ও ১৯নং খিত্তা, নড়াইল ২০নং খিত্তা, মাদারীপুর ২১নং খিত্তা, ভোলা ২২ ও ২৩নং খিত্তা, মাগুরা ২৪ নং খিত্তা, পটুয়াখালী ২৫নং খিত্তা, ঝালকাঠি ২৬নং খিত্তা এবং পঞ্চগড় ২৭নং খিত্তায় মুসল্লিরা অবস্থান নেবেন।
জুমার নামাজে ভিআইপিরা
শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজ আদায় করতে রাজধানী ঢাকা থেকে মন্ত্রী, সংসদসদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবর্গসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ভিআইপি অতিথিরা ইজতেমা ময়দানে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
যৌতুক বিহীন বিয়ে
ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ি শনিবার বাদ আসর শতাধিক যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল থেকে ওইসব বিয়ের জন্য বয়ান মঞ্চের কক্ষেই বর-কনের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
ইজতেমা ময়দানে হামদর্দ, ইবনে সিনা, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি, আবেদা মেমোরিয়াল প্রাইভেট হাসপাতাল লিমিটেড, সি কে ডি অ্যান্ড ইউরোলজিস্ট হসপিটাল, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদফতর চিকিৎসা কেন্দ্র, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ ৫৪ ফ্রি মেডিকেল বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার জন্য ক্যাম্প খুলেছে।
ইজতেমার মুরুব্বীদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
জেডএইচ/পিআর