দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর


প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ০৭ জানুয়ারি ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরেফ আহমেদসহ দলের পাঁচ নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই আসামি সাফায়েত হোসেন হাবিব ও আনোয়ার হোসেনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ১ মিনিটে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এই দুই খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে এখনও মৃত্যুর প্রহর গুনছেন অপর আসামি রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু। আর কিছুক্ষণ পরই তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

এই তিনজন হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রাজনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন হাবিব, কুর্শা গ্রামের উম্মত মন্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও সিরাজ ওরফে আবুল হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু ওরফে আকবর।

তাদের মরদেহ শুক্রবার সকাল ৭টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হস্তান্তর করা হবে। পুরো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।


এর আগে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে আসামি আনোয়ার ও ঝন্টুর সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরা দেখা করেন। সন্ধ্যার পর দুই পরিবারের ৮ সদস্য শেষ সাক্ষাত করে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাফায়েত হোসেন হাবিবের সঙ্গে তার পরিবার দেখা করেন।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে এই তিনজনের ফাঁসি কার্যকরের জন্য বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। ফাঁসির আসামি ঝন্টু, হাবিব ও আনোয়ারের পরিবারের সদস্যদের শেষ সাক্ষাৎ করার জন্য চিঠি দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঝন্টু ও আনোয়ারের পরিবার শেষ সাক্ষাৎ করার জন্য কারাগারে প্রবেশ করেন। কারাগারের নিরাপত্তার জন্য সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের পাহারা বাড়ানো হয়েছে।

কারাগার সূত্র জানিয়েছে, রাত ১১টা ১ মিনিটে হাবিব ও আনোয়ারের ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ তানভীর হাসান রাজু ও হযরত আলী। ফাঁসি কার্যকরের জন্য দু’দিন আগেই তাদেরকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যশোরে নিয়ে আসা হয়।


এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি (প্রিজন) টিপু সুলতান, যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, সিভিল সার্জন শাহাদাৎ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল হাসান প্রমুখ।

পুলিশ ও কারা সূত্র মতে, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় দুর্বৃত্তদের ব্রাশ ফায়ারে খুন হন জাসদের সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদনেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডল।

ওই ঘটনার পরদিন দৌলতপুর থানার তৎকালীন এসআই মো. ইসহাক আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত এ হত্যা মামলায় ১০ জনের ফাঁসি এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। পরে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন।

২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট আদালত ফাঁসির এক আসামি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১০ জনকে খালাস দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ (বাদী) সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট।


পরে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ করেন। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর এ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্ট। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন সাফায়েত হোসেন হাবিব, আনোয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু। এ আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

এ মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন চরমপন্থি দলের সক্রিয় সদস্য কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পচাভিটা গ্রামের মান্নান মোল্লা, মিরপুর উপজেলার কুর্শা মেহেরনগরের রমজান আলীর ছেলে জাহান আলী, বালিয়াশিষা গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন, মেহেরপুরের গাংনি উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নায়েব মণ্ডলের ছেলে রওশন ও কিশোরীনগর গ্রামের মোজাহার উদ্দিনের ছেলে বাকের উদ্দিন।

যশোর প্রতিনিধি/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।