পে-কমিশন সুপারিশ নিয়ে আপিল বিভাগের ক্ষোভ


প্রকাশিত: ০৬:৫৭ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৬

নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বিচারকদের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত জনস্বার্থে করা একটি মামলার শুনানিতে আদালত এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় আদালত আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ‘মাসদার হোসেন’ (বিচার বিচাগ পৃথকীকরণ) মামলা কার্যতালিকায় থাকার জন্য বলেন। সেদিন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গঠিত পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত গেজেট হয়েছে। কিন্তু বিচারকদের পে-কমিশনের সুপারিশ এখনও গেজেট না হওয়ায় আপিল বিভাগ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, আদালত আমাকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। আমি বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীকে বলেছি।’ গত বছরের ২৭ এপ্রিল বিচার বিভাগীয় পে-কমিশনের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই সুপারিশ পড়ে আছে। বুধবার আপিল বিভাগে (সুপ্রিম কোর্টের) বিচারকদের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থে করা মামলার শুনানিতে ক্ষোভ দেখান।

আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি প্রশ্ন ছোড়ে বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য গঠিত পে-কমিশনের সুপারিশ গত ১৫ ডিসেম্বর গেজেট জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমাদের বিচারকদেরটা কী হলো? বিচার বিভাগের সঙ্গে এ ধরনের বিমাতা সুলভ আচরণ করা কি ঠিক? আদালত বলেন, আর পে-কমিশনের সুপারিশ যদি এখান থেকে আদেশ দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে সেটা কি সরকারের জন্য শুভ হবে?

আদালত আরও বলেন, সচিবরা বেতন নিয়ে নিচ্ছেন। আর নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হচ্ছে না। বিচারকরা ছাড়া সবাই বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলন করেছেন। বিচারকদেরও ক্ষোভ রয়েছে। বিচারকরা যদি বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলন করে তার ফল ভালো হয় না। এটা আমরা কাম্যও করি না। এদেরকে উপেক্ষা করা কি ঠিক হবে?

সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (রিম্যুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অর্ডিন্যান্স-১৯৭৮ এর সংশোধনী বিল পাসের আগে এই আইনে বিচারপতিদের দুটি উৎসব ভাতা অন্তর্ভূক্ত করার দাবি করা হয় সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু এটাও বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

আদালত বলেছেন, আমরা কি অনুগ্রহ নিচ্ছি। এই দুটি ভাতা আইনের মধ্যে আন্তর্ভূক্ত করতে সমস্যা কোথায়? এগুলো সংবিধান ভঙ্গের শামিল। আপনারা কি চান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আমাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি-দাওয়া পেশ করুক? এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সরকার এগুলো বাস্তবায়ন করবে। আদালত তখন অ্যাটর্নি জেনারেলকে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিতে বলেন।

প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়। এর আগেই বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার বিষয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা-২০০৭ জারি করে সরকার। এই বিধি অনুযায়ী জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বিচারকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে বিচার বিভাগীয় পে-কমিশন। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি বাস্তবায়িত  হয়নি।

২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথক ঘোষণার পরে এই বিধিমালা অনুসরণ করে একটি পে-কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিশন ২০০৮ সালের ২ জুন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল ও ভাতার বিষয়ে সুপারিশ করে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপের পর ২০১৩ সালের জুন মাসে ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

পে-কমিশনের একটি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতেই কেটে যায় দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ভেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য নতুন পে-কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ৯ সদস্যের এ কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয় আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে। এ কমিশন ৫টি সভা করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন। কিন্তু আজও ওই সুপারিশ পড়ে থাকায় ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন বিচারকরা।

এফএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।