‘তিস্তার পানি বণ্টনে সহযোগিতার ক্ষেত্র এখনো রয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৩ এএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ/ফাইল ছবি

তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র এখনো রয়েছে। এটি কেবল এক পক্ষের লাভের বিষয় হতে পারে না। সপ্তম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন ২০২২ এ এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সপ্তম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন ২০২২’ এর শেষ দিনে ‘তিস্তা নদী অববাহিকা: সংকট উত্তরণ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, মানুষ ও প্রকৃতিভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রেখে সমাধানের পথ বের করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, নদীর পানি শাসনের ক্ষেত্রে প্রকৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির তার বক্তব্যে বলেন, মানুষ নদীর সঙ্গে বসবাস করে কিন্তু সাধারণত নদী সংক্রান্ত আলোচনায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

jagonews24

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পানি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ধারণাটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের লোকদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এসেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সম্প্রদায়ভিত্তিক পানি জাদুঘরটি ২০১৪ সালে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পানি জাদুঘর এখন আইডিয়া জেনারেশন, নদীভিত্তিক তৃণমূল মানুষের কণ্ঠস্বর, শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম এবং গ্লোবাল ওয়াটার মিউজিয়ামের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

অতিথির বক্তব্যে দ্য গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব ওয়াটার মিউজিয়ামের নির্বাহী পরিচালক ড. এরিবার্তো ইউলিস বলেন, তিস্তা নদী অন্যান্য নদীর মতোই পরিবর্তনের প্রতীক। পানি সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সহযোগিতা ও ভালো অনুশীলন প্রয়োজন।

যেকোনো পানি জাদুঘর তৈরি করার সময়, আমাদের কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথাই নয়, সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপের কথাও মাথায় রাখা উচিত, তিনি যোগ করেন।

বক্তব্যে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরিয়াল ফেলো শহীদুল হক বলেন, আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আরও ভালো সহযোগিতার পথ খুঁজে পেতে পারি। আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার, জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আরও মিথস্ক্রিয়া হওয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনা করেও ভিন্ন ন্যারেটিভে এগিয়ে যাওয়া উচিত। শহীদুল হক সরকারকেন্দ্রিক কাঠামোর পরিবর্তে বৃহত্তর জনগণকেন্দ্রিক কাঠামোকে বেছে নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মানসিকতার পরিবর্তন ও কাঠামো পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টারি অ্যাকশন ফর সোসাইটির (আভাস) নির্বাহী পরিচালক এবং অ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ পরিষদের সদস্য রহিমা সুলতানা কাজল তার বক্তব্যে তুলে ধরেন কীভাবে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পানি জাদুঘর প্রান্তিক মানুষের অধিকার রক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করার ফলে নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তথাকথিত উন্নয়ন করতে গিয়ে নদীর পানির সুষম বণ্টন হচ্ছে না। যার ফলে ব্যবহারযোগ্য পানির অভাব দেখা দিয়েছে। নদীর পানি ব্যবহার নিয়ে যেসব আইন রয়েছে সেই আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না, বলেন রহিমা সুলতানা কাজল।

কাউনিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, নদী মরে গেলে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনজীবনও মরে যায়। সেই জনজীবন যদি নদীকেন্দ্রীক জীবিকা ও শ্রম থেকে বিচ্ছুত হয় ও স্বাভাবিক কার্যক্রমের মধ্যে না থাকে তাহলে হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতিও নষ্ট হয়ে যায়।

সম্মেলনের শেষ দিনে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন নেপাল আইএসইটিয়ের উপদেষ্টা অজয় দীক্ষিত, লিভিং ওয়াটারস মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অ্যাডজান্ট প্রফেসর ডা. সারা আহমেদ এবং এওএসইডিওর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফিন।

এফএইচ/এমআরআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।