উত্তরাঞ্চলে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (বীর প্রতীক) বলেছেন, উত্তরাঞ্চল জুড়ে বেশি বেশি ফসল উৎপাদনে কৃষকদের সেচ প্রদানের লক্ষ্যে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচ পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বুধবার দুপুরে ডালিয়ার অবসর রেস্ট হাউসে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শীঘ্রই শুরু করা হচ্ছে সেচ প্রকল্পটির দ্বিতীয় পবের্র কাজ। এজন্য প্রস্তাবনার ২৬৬ দশমিক ৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন করে প্রস্তাবনায় আরো ৫৫ দশমিক ০৭ হেক্টর জমি রয়েছে।
ইতোমধ্যে ১১৮ দশমিক ৮৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৯২ দশমিক ৬৯ হেক্টর জমি অচিরেই অধিগ্রহণ করা হবে। জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে ৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রস্তাবনার আরও ১৮৮ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনার ফলশ্রুতিতে, তিস্তা নদীর অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তির ফ্রেম ওয়ার্ক চূড়ান্ত করা হয়েছে। অচিরেই এটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে তিস্তায় আর পানি সঙ্কট থাকবে না। উত্তরাঞ্চল মরুভূমি নয় পরিণত হবে শষ্যভূমিতে। তাই তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের পরিধি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলার সেচ যোগ্য কমান্ড এলাকায় ৯১ হাজার ২২৬ হেক্টর জমি রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে এর পরিধি বৃদ্ধি করা হবে এক লাখ হেক্টর জমির সেচ প্রদানের জন্য।
বৈঠক শেষে মন্ত্রী ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের মূল কাঠামো পরিদর্শনের সময় সংরক্ষিত এলাকার সকল সিসি ক্যামেরা অকেজো দেখতে পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন। অপরদিকে, তিস্তা ব্যারাজে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা আনসার ব্যাটালিয়ান দলটির বিভিন্ন অনিয়ম কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাদের অপসারণ করে নতুন করে আনসার বাহিনী নিয়োজিত করার নির্দেশ প্রদান করেন।
এসময় পাউবোর যুগ্ম সচিব মন্টু কুমার বিশ্বাস, পাউবো পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, পাউবোর প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান, পাউবোর উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আতিকুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (১) জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (২) লুৎফর রহমান, পাউবোর উপসচিব তোফাজ্জেল হোসেন, নীলফামারীর ডিসি জাকীর হোসেন, দিনাজপুরের ডিসি মীর খায়রুল আলম, রংপুরের ডিসি রাহাত আনোয়ার, তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবার রহমান, নীলফামারী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মাহমুদ শেখ, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের বিভিন্ন অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় চলতি খরিপ-১ রবি মৌসুমে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতারায় অবস্থিত এস-টু-টি সেচ ক্যানেলের কপাট উন্মুক্তের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালে এই মৌসুমে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও সেচ পায় মাত্র সাড়ে ২৫ হাজার হেক্টর জমি। একাধিক সূত্র জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, কোচবিহার ও মালদহ এলাকায় ভারত তাদের গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। সেখানে তাদের প্রচুর সেচ দিতে হয়। তার উপর তিস্তা নদীর উপর একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। ফলে তিস্তায় যে পরিমাণ পানি সিকিম থেকে নামছে তা পর্যাপ্ত নয়। যা ভারতের ওই সমস্ত এলাকায় চাহিদা মতো সেচ প্রদান সম্ভব হয় না। সেখানে বাংলাদেশে তিস্তার পানির পাওয়া বিষয়টি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। গত বছর পানি প্রবাহ ২শ` কিউসেকে নিচে নেমে আসে।
তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জাগো নিউজকে জানান, চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ থেকে আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেচ প্রদান শুরু করা হবে। কিন্তু উজানের প্রবাহ দিন দিন কমে আসায় তিস্তা নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকায় সম্পূরক সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ফলে এবার রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে (সেচ নির্ভর বোরো) আবাদের সেচ প্রদানের জন্য ১০ হাজার হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রংপুর তিস্তা ভবনে প্রধান প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সেচ প্রদানের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তিস্তার পানি প্রবাহ কম থাকায় চলতি মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/আরআইপি