নগরীতে অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন আন্ডারপাস
আন্ডারপাসটির দুই পাশের দেওয়ালে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি, নগরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনা প্রবাহের পুরোনো ছবি। বিশেষ ফ্রেমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ মিনার, জাতীয় সংসদ ভবনের ছাপ। বয়স্ক, শিশু এবং অসুস্থ রোগীদের জন্য রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, লিফটের ব্যবস্থা। আছে প্রাথমিক চিকিৎসা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। চলার পথে সাউন্ডবক্সে বেজে উঠছে ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি/মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি’সহ নানান গান।
এমন দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখে চলার পথেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন পথচারীরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ঘুরে দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। পথচারীদের প্রায় সবার মুখে একই কথা, ‘এটি আন্ডারপাস নয়, জাদুঘর’।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এই আন্ডারপাসের দেখা মিলবে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে। ৪২ মিটার বক্স সেকশনের এই আন্ডারপাস নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। আন্ডারপাসটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুর সপ্তক’।
সুরসপ্তকের নান্দনিক দেওয়াল
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই এই আন্ডারপাস এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত হয় শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া। এরপর সারাদেশে ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সেই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির অন্যতম একটি দাবি ছিল দুর্ঘটনাস্থলে পদচারী সেতু বা আন্ডারপাস নির্মাণ করা। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই আন্ডারপাস স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
নির্মাণের পর গত ১২ জানুয়ারি গণভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হোটেল রেডিসন ব্লু, আর্মি স্টেডিয়াম, শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বনানীর দিকে আসা-যাওয়ার জন্য মোট চারটি প্রবেশপথ রয়েছে আন্ডারপাসটিতে। প্রতিটি প্রবেশপথেই ওঠা-নামার জন্য পৃথক লেন রয়েছে। অসুস্থদের জন্য রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি। যারা হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন তাদের জন্য রয়েছে লিফট এবং পৃথক সিঁড়ি। পুরো আন্ডারপাসটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। এর ওপরের অংশ কাচ দিয়ে মোড়ানো। ফলে সূর্যের আলো সরাসরি আন্ডারপাসে ঢুকছে। দিনে লাইটের তেমন দরকার হচ্ছে না। এর ভেতর পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর চারজন সদস্যকে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ফলে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন পথচারীরা।
স্বচ্ছ কাচে ঘেরা আন্ডারপাসের উপরের অংশ
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে হেঁটে কলেজে যাচ্ছিলেন একাদশ শ্রেশির শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, কলেজের সাবেক দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর সারাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। তারপর এই আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এখন এটি নির্মাণ হওয়ায় শিক্ষার্থীসহ সবার সুবিধা হয়েছে। এভাবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় আন্ডারপাস স্থাপন করলে দুর্ঘটনা কমবে।
রেডিসন হোটেল এলাকা থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের দিকে যাওয়ার জন্য এই আন্ডারপাস ব্যবহার করছেন খিলক্ষেতের বাসিন্দা ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই আন্ডারপাসের ভেতর ঢুকলে মনে হয় এটা কোনো বিলাসবহুল বহুতল ভবন। অত্যাধুনিক আন্ডারপাসটিতে সব সুযোগ-সুবিধাই রাখা হয়েছে। উদ্বোধনের পর অনেকেই প্রতিদিন বিকেলে এটি দেখতে যান।
আন্ডারপাসের প্রবেশপথে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, ছবি: জাগো নিউজ
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর জাগো নিউজকে বলেন, এই আন্ডারপাসটি একটি মিউজিয়ামের আদলে তৈরি করা হয়েছে। এখানে নাগরিকদের জন্য আধুনিক সব সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটি স্থাপনে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আগামী এক বছর পর্যন্ত এটা দেখাশোনা করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারপরও যদি সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধান করতে চায়, সেটি আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।
এমএমএ/এমএইচআর/এএসএম