সিরাজগঞ্জে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা


প্রকাশিত: ০৯:৩৬ এএম, ০৫ জানুয়ারি ২০১৬

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে পূর্ণিমাগাঁতী গ্রামে শুরু হয়েছে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খেলা ঘোড়দৌড়। এই প্রতিযোগিতায় সিরাজগঞ্জসহ ৫টি জেলার ঘোড়া অংশ নিয়েছে।

একই সঙ্গে এই প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শুরু হয়েছে গ্রামীণ মেলা। যে কারণে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ।

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতাটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। বই পুস্তকে এ খেলার বর্ণনা মিললেও বাস্তবে খুব একটা আর চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে আর স্থানীয় মানুষদের বছরে অন্তত একবার বিনোদন দিতে পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়ন পরিষদ এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। সোমবার দুপুর ২টায় খেলার মাঠের দিকে ছুটে চলে হাজারো মানুষ। দলে দলে মানুষ ছুটে চলেছে ঘৌড়দৌড় দেখতে।

প্রতিযোগিতা দেখতে বিকেল ৪টা বাজার আগেই মাঠের চারপাশে হাজারো জনতার ভিড় জমে যায়। গত বছর থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে এই খেলা। নতুন করে নিজের এলাকায় ঘৌড়দৌড় চালু হওয়ায় সব বয়সের মানুষই খুশি। পাঁচদিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতা চলার পর আগামী শুক্রবার প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় স্থান বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। তবে সোমবারের খেলায় নাটেরের মানিকের বঙ্গবীর ঘোড়া প্রথম ও বগুড়ার মিলনের ঘোড়া ২য় হয়।

Sirajganj-Horss-Race

পূর্ণিমাগাঁতী গ্রামের জাহিদুল হক জাগো নিউজকে জানান, ঘৌড়দৌড়কে সামনে রেখে গ্রামের মাঠে শুরু হয়েছে গ্রামীণ মেলা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে এসেছেন। যে কারণে এই গ্রামের প্রতিটি ঘরে এখন ঈদের আমেজের বিরাজ করছে।

একই গ্রামের স্কুল পড়ুয়া শাহানা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, বইয়ের মাধ্যমে ঘোড়দৌড়ের কথা জানতে পারলেও বাস্তবে গত বছর থেকে এই প্রতিযোগিতা নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হলে অন্য এলাকায় তার মতো বয়সীরা এখানে আসবে। এই প্রতিযোগিতা প্রতিবছর আয়োজন করার জন্য তিনি আয়োজক কমিটির প্রতি আহ্বান জানান।

শাহজাদপুর থেকে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে আসা আব্দুস সামাদ সরকার জাগো নিউজকে জানালেন, ছোটবেলা থেকেই ঘোড় দৌড়ের কথা শুনে এসেছেন। কিন্তু কোনোদিন স্বচক্ষে দেখার সুযোগ মেলেনি। যে কারণে অনেক কষ্ট স্বীকার করেও এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছেন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চণ্ডিদাশগাঁতী গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক জাগো নিউজকে জানালেন, এই গ্রামে তিনি বিয়ে করেছেন। গত বছর থেকে শুরু করা হয়েছে এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। এই কারণে স্ত্রী-সন্তানসহ এসেছেন শ্বশুড়বাড়িতে। শুধু ঘোড়দৌড় নয় গ্রামীণ মেলা ও প্রতিটি বাড়ির আনন্দ দেখে মনে হয় এই পাঁচদিন এই গ্রামে ঈদ পালন করা হচ্ছে। এমন আনন্দে গ্রামবাসীর পাশাপাশি তিনিও বেশ আনন্দিত।

এ ব্যাপারে পূর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আয়োজক এস এম রাশেদুল হাসান জাগো নিউজকে জানালেন, দাদার আমলের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই গত বছর থেকে নতুন করে শুরু করা হয়েছে এ খেলা। স্থানীয় মানুষকে বছরে অন্তত একবার বিনোদন দিতেই এ আয়োজন। তবে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এলাকাবাসী তার কিছুটা পূরণ করলেও ভবিষ্যতে কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের এই আয়োজনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা এই আয়োজকের।

বাদল ভৌমিক/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।