থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজির শব্দে কাঁপছিল উমায়ের, পরদিনই মৃত্যু

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০২২
তানজিম উমায়ের জন্মথেকেই হৃদরোগে ভুগছিল/ছবি তার বাবা ইউসুফ রায়হানের ফেসবুক

অডিও শুনুন

ইংরেজি নববর্ষের রাতে (থার্টি ফার্স্ট নাইট) আতশবাজির শব্দে ভয় পেয়ে অসুস্থ হয়ে তানজিম উমায়ের নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জন্ম থেকেই হৃদরোগে ভুগতে থাকা শিশুটি মাত্র চার মাস ১৯ দিন বয়সী ছিল।

উমায়েরের পরিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। গত ৩১ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরদিন শনিবার (১ জানুয়ারি) শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

শিশুটির বাবা ইউসুফ রায়হান ‘মোহাম্মদী টেলিকম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলে উমায়েরের জন্মের পর থেকেই হৃদরোগের সমস্যা ছিল। তার প্রায়ই শ্বাসকষ্ট হতো এবং শরীর ঘেমে যেত।’

‘এই ঘটনার আগে উমায়ের ১২ দিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এরপর হৃদরোগের সমস্যা থাকায় তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুটা সুস্থবোধ করায় তাকে চারদিন পর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় নিয়ে আসি। এক সপ্তাহ পর আবারও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য বলা ছিল। সে সুবাদে আমাদের বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসককে দেখানোর কথা থাকলেও চিকিৎসক ব্যস্ত থাকায় শনিবার (১ জানুয়ারি) সকালে যাওয়ার কথা হয়। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে তার অপারেশন করার কথা ছিল।’

Inner-1.jpgছোট্ট শিশু তানজিম উমায়ের শায়িত এখানে

ইউসুফ রায়হান বলেন, ‘আমার ছেলেটা সারাদিন হাসিখুশিই ছিল। কিন্তু সেদিন (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১২টার পর থেকেই টানা বাজির শব্দে ছেলেটা বারবার কেঁপে উঠছিল। বাড়ির কাছে যেগুলো ফুটছিল সেগুলোর কারণে বিকট শব্দ হচ্ছিল। এরপর তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। সাধারণত রাতে তার ঘুম কম আসতো। সেদিন সারারাত সে ছটফট করছিল। শ্বাসকষ্ট হলে তাকে নেবুলাইজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। বলতে গেলে সে রাতে তাকে আধঘণ্টা পরপরই নেবুলাইজ করতে হচ্ছিল।’

পরদিন সকালে উমায়েরকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুটির বাবা বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় সকাল ১০টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেল ৪টায় তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে নল দিয়ে খাবার দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু প্রথমবার দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের খাবার তার এক নাক দিয়ে গেলে অন্য নাক দিয়ে বের হয়ে আসছিল। এসময় তার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে এলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যান। একপর্যায়ে চিকিৎসকরা জানান, উমায়েরের অবস্থা ভালো নয়। এর কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চার মতো অনেক শিশুরই এ ধরনের সমস্যা থাকে। যাদের হৃদরোগের সমস্যা থাকে, উচ্চশব্দে তাদের সমস্যা হয়। আমি চাই না এভাবে আর কারও সন্তান বা কেউ মারা যাক।’

এ বিষয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনো কিছু ভাবিনি। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা নিলে যদি অন্য কোনো সন্তান বাঁচতে পারে, তাহলে আমি এজন্য ব্যবস্থা নিতে রাজি আছি।’

এএএম/এমআরআর/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।