নওগাঁয় মা ও মেয়ের আত্মহত্যা
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় অভাব-অটনের মধ্যে মরণব্যাধি ক্যানসার ও শ্বাসকষ্ট রোগের চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে মা-মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। নিহতরা হলেন উপজেলার মালশন গ্রামের মকসেদ আলীর মেয়ে কোহিনূর বেগম (৩৫) ও তার মেয়ে মুন্নি আকতার (৭)।
রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি, তদন্ত) আব্দুল্লাহ হিল জামান জানান, একই গ্রামের জসিম উদ্দিনের সঙ্গে ৯/১০ বছর আগে কোহিনূর বেগমের বিয়ে হয়। কোহিনূর বেগম তৃতীয় স্ত্রী হওয়ায় বিয়ের দুই/তিন বছর পর থেকে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এর জের ধরে তাদের মধ্যে তালাক না হলেও প্রায় চার বছর আগে কোহিনূর বাবার বাড়ি থাকতেন।
পরিবারের অভাব-অনটন মেটাতে ঢাকায় মানুষের বাড়িতের প্রায় তিন বছর আগে কাজ শুরু করেন। কাজের মধ্যেদিয়ে বেঁচে থাকার যখন স্বপ্ন দেখছেন তখন ছয় মাস আগে তার শরীরে ধরা পরে মরণব্যাধি ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগ। সেখানে তার মেয়ে মুন্নি আকতারও শ্বাসকষ্ট, জন্ডিসে আক্রান্ত হয়।
তিনি জানান, ঢাকায় একটি বাড়িতে কাজের মধ্যেদিয়ে ৪-৫ হাজার টাকা পেয়েও চিকিৎসার জন্যে খরচ বেশি হতো। এ ছাড়াও মাসের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ দিন চিকিৎসকের কাছে হাসপাতালে যেতে হতো। এমতাবস্থায় তার চিকিৎসার ব্যয় বহন না করতে পেয়ে ও শরীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে মাস-তিনেক আগে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন কোহিনূর বেগম। স্বামীও কোনো খরচ দিতেন না। এ দিকে বাবা মকসেদ আলী দিন মজুরি হওয়ায় তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
এ সময় তিনি মারা গেলে তার মেয়ে মুন্নি আকতারের কী হবে এই ভেবে হয়তো সকাল ৯টার দিকে প্রথমে তার মেয়ে মুন্নিকে বিষ পান করানো পর নিজেও বিষ পান করেন। স্থানীয়রা পরে ঘটনাটি জানতে পেরে তাদের দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর নওগাঁ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মেয়ে মুন্নি ও সন্ধ্যায় মা কোহিনূর বেগমের মৃত্যু হয়।
রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল লতিফ খান জানান, সোমবার সকালে নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। এ ব্যাপারে পৃথক অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
আব্বাস আলী/বিএ