সিদ্ধিরগঞ্জে টাকা নিয়ে ১৩শ শিক্ষার্থীকে বই দিল কর্তৃপক্ষ, অতঃপর
সিদ্ধিরগঞ্জে একটি প্রাইমারি স্কুলে বিনামূল্যের বই মূল্য নিয়ে বিতরণকালে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। শনিবার এ ঘটনা ঘটে। বই বিতরণকালে স্কুলটির প্রায় ১৩শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ২শ টাকা করে আদায় করছিল স্কুল পরিচালনা পর্ষদ। এসময় প্রতিবাদ করায় পর্ষদের এক সদস্য অশোভন আচরণ করে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে। বই না পেয়ে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থীকে কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে বের হতে দেখা গেছে।
খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষোভ করতে থাকে অভিভাবকরা। পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভের মুখে আদায়কৃত অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হয় পরিচালনা পর্ষদ।
অভিভাবকরা জানায়, শনিবার সকাল থেকে ৮৯ নং তাঁতখানা সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ে ১৩শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নতুন বই দেয়ার নামে ২শ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছিল বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা এমএ বারি, যুবলীগ নেতা মাহাবুব, পরিচালনা পর্ষদ সদস্য গাজি সেলিম। যারা টাকা দিচ্ছিল না, তাদেরকে বই না দিয়ে জোরপূর্বক স্কুল থেকে বের করে দেয় পরিচালনা পর্ষদের কর্তাব্যক্তিরা। এ খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে আসে। এসময় অভিভাবকরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে পরিচালনা কমিটির সদস্য গাজি সেলিম আহমেদ ও মাহাবুব।
এসময় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বই না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে বের হয়ে যায়। পরে স্কুলের বাইরে অভিভাবকরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে এলাকাবাসী, অভিভাবক ও গণমাধ্যমকর্মীদের চাপে কিছু শিক্ষার্থীর টাকা ফেরত দেয় পরিচালনা পর্ষদ।
তানিয়া আক্তার নামে ৫ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম এ বারির উপস্থিতিতে কান্না করে গণমাধ্যম কর্মী ও এলাকাবাসীকে বলে, গাজি স্যার সকালে ২শ টাকা নিয়েছে। এখন টাকা ফেরত চাইলে সে স্কুলের রুম থেকে বের করে দিয়েছে।
অভিভাবক মো. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, আমার মেয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হতে আসলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য গাজী সেলিম নতুন বই বাবদ ২শ টাকা চায়। প্রতিবাদ করলে অন্য স্কুলে ভর্তি করাতে বলে।
ময়না আক্তার নামে আরেক অভিভাবক বলেন, গাজি সেলিমসহ অন্যান্য সদস্যরা আমার ছেলেকে ভর্তি করাতে এলে ২শত টাকা চায়। এ সময় একশত টাকা দিলে গাজি সেলিম আমাকে স্কুল থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
আবুল হোসেন নামে আরেক অভিভাবক বলেন, সকালে ১৫০ টাকা দিয়ে আমার নাতিকে স্কুলে পাঠালে বই না দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রইসউদ্দিন বলেন, সরকারের নিয়ম মেনে শুক্রবার থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করছি। তাহলে কেন এ টাকা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ভালো জানে। পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা এম এ বারি সাংবাদিকদের বলেন, আমি গাজিকে বলেছিলাম ২ মাস পর টাকা নিতে। সে কোনো কথা না শুনে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ২শ টাকা করে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, এ টাকায় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শিক্ষকদের বেতন দেয়া হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আফরোজা সুলতানা চৌধুরী বলেন, বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মাহফুজা আক্তার বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া রোববার আমি ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে পদক্ষেপ নেব।
হোসেন চিশতী সিপলু/এমএএস/পিআর