ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে ভারতে পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২১

রাজধানীর মিরপুর থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪। এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদেশ গমনেচ্ছুদের টার্গেট করে অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখাতো। যারা রাজি হতো তাদের কাছ থেকে ১২-১৫ লাখ টাকা করে নিতো।

র‍্যাব বলছে, ওই চক্রটি বিদেশ গমনেচ্ছুদের ‘বাংলাদেশ থেকে ভিসা পাওয়া জটিল’ বলে বুঝিয়ে ভারতে নিয়ে যেতো। সেখানে যাওয়ার পর তাদের টর্চার সেলে আটকে রেখে আরও টাকা দাবি করতো। চক্রটি শতাধিক ব্যক্তিকে ভারতে পাচার করেছে।

সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর পল্লবী ও উত্তরায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় চক্রের মূলহোতা মল্লিক রেজাউল হক ওরফে সেলিম (৬২) এবং তার দুই সহযোগী মো. বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)।

মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

jagonews24

তিনি বলেন, ভারতে নিয়ে ভিকটিমদের প্রথমে সেফ হাউজে রাখা হতো। তারপর তাদের ওপর চলতো অমানবিক নির‍্যাতন। এসব নির‍্যাতনের ভিডিও ধারণ করে বাংলাদেশ থাকা ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠাতো চক্রটি। পরিবারকে তারা এসব ভিডিও দেখিয়ে বলতো, ১২-১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে ভিকটিমকে মেরে ফেলবে। পরে ভিকটিমদের পরিবারগুলো প্রিয়জনকে বাঁচাতে সর্বস্ব বিক্রি করে চক্রটির সদস্যদের হাতে টাকা তুলে দিতো।

অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তিকে ভারতে পচার করে চক্রটি। পাচার হয়ে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন কলকাতায় আটক থাকে জাহাঙ্গীর। আটক অবস্থায় কলকাতার টর্চার শেলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির‍্যাতন করা হয়। পরে নির‍্যাতনের এসব ভিডিও দেখিয়ে দেশে থাকা তার পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে অর্থ আদায় করে পাচারকারীরা। দেশে এসে ভিকটিম জাহাঙ্গীর চক্রটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে আমাদের কাছে। তার দেওয়া তথ্য ও অভিযোগ যাচাই করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই চক্রের মূলহোতাসহ তিন জনকে গতকাল রাতে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া পাসপোর্ট, পাসপোর্টের কপি, নকল ভিসা, আবেদনপত্র, বায়োডাটা, ছবি, মোবাইল, মোবাইল সিম একং নগদ টাকাসহ মানবপাচার সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, এই চক্রে গ্রেফতাররা ছাড়াও সহযোগী হিসেবে আরও ৫-৭ জন রয়েছে। তাছাড়া ভারতেও তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কলকাতার রাজিব খান, মানিক ও দিল্লির রবিন সিংদের নাম পাওয়া যায়। গত কয়েক বছর ধরে এই চক্রটি সক্রিয়ভাবে মানবপাচার করে আসছে।

গ্রেফতাররা জানিয়েছে, ভিকটিমদের ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ইউরোপে উন্নত চাকরি দেওয়ার নামে বৈধ এবং অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে রূপনগর থানায় মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

টিটি/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।