জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভারতের রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ঢাকা সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এসময় শহীদদের প্রতি সামরিক কায়দায় সশস্ত্র সম্মান জানায় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল। বেজে ওঠে বিউগলের করুণ সুর।
এরপর দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর ও সবশেষ একটি চারাগাছ রোপন করেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি।
সামাজিক মাধ্যম টুইটারে ভারতীয় কূটনীতিক অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, দর্শনার্থী বইয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের চেতনা আমাদের চিন্তা ও কর্মে অব্যাহত থাকুক।’
স্মৃতিসৌধে রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে তার স্ত্রী ভারতীয় ফার্স্ট লেডি সবিতা কোবিন্দ ও তাদের মেয়ে স্বাতী কোবিন্দ ছাড়াও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
মুজিব জন্মশতবর্ষ ও মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনে অংশ নিতে তিন দিনের সফরে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে সস্ত্রীক ঢাকায় পৌঁছান ভারতীয় রাষ্ট্রপতি।
তিনি ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখানে প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপতি ও ফার্স্ট লেডি সবিতা কোবিন্দকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও ফার্স্ট লেডি রাশিদা খানম।
বিদেশি কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানকে ফুল দিয়ে বরণ করার রেওয়াজ থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা হয়নি, এমনকি দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধাদের মধ্যে করমর্দনও হয়নি।
তবে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে রামনাথ কোবিন্দকে স্বাগত জানানো হয়। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। দেওয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা। গার্ড পরিদর্শনকালে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে লাইন অব প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
রামনাথ কোবিন্দের সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন ভারতীয় ফার্স্ট লেডি সবিতা কোবিন্দ ও তাদের মেয়ে স্বাতী কোবিন্দ, ভারতের শিক্ষামন্ত্রী, দুজন সংসদ সদস্য এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাসহসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ভারতের রাষ্ট্রপতির আগমন ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় বিমানবন্দর এলাকা। টার্মিনালের উপরে ও সামনে বাংলাদেশ-ভারতের বিপুল সংখ্যক পতাকা টানানো হয়েছে। ভিভিআইপি টার্মিনালের দু’পাশে দুদেশের রাষ্ট্রপতির দুটি বড় ছবি বসানো হয়েছে। টার্মিনালের উপরে বড় অক্ষরে লেখা ‘স্বাগতম হে মহামান্য অতিথি’।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি। সেখানে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া দর্শনার্থী বইয়ে সই ও একটি চারাগাছ রোপণ করেন।
স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি বাংলাদেশে একযোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবেন।
সফরের প্রথম দিন বিকেলে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাতে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির বৈঠক হবে। সেখানেও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এরপর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির আয়োজনে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৈশভোজে যোগ দেবেন।
সফর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির কাছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ব্যবহৃত দুটি প্রতিরূপ, রাশিয়ার তৈরি টি-৫৫ ট্যাংক এবং মিগ-২১ ভিন্টেজ বিমান উপহার হিসেবে দেবেন। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ১৬ ডিসেম্বর ন্যাশনাল প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে যোগ দেবেন।
বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বাংলাদেশের জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং বিজয়ের আনন্দ উদযাপনের জন্য ‘মহান বিজয়ের বীর’ শিরোনামে রামনাথ কোবিন্দ একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
সফরের তৃতীয় দিনে ১৭ ডিসেম্বর ভারতীয় রাষ্ট্রপতি রমনা কালী মন্দিরের নতুন সংস্কার করা অংশের উদ্বোধন ও পরিদর্শন করবেন বলে জানা যায়। ওইদিন বিকেলে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতির।
এমকেআর/জেআইএম