নির্বাচনী সংস্কৃতিতে পরিবর্তন জরুরি


প্রকাশিত: ০৪:১৭ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

দেশে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন সম্পন্ন হল গতকাল। ২৩৪টি পৌরসভার এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে এটা বলা যায় নিঃসন্দেহে। যদিও সংঘাত, সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান এবং নির্বাচনী সহিংসতায় একজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে সবদিক মিলিয়ে বললে বড় ধরনের কোনো অঘটন ছাড়াই এই বিরাট কর্মযজ্ঞ মোটামুটি উৎসব মুখর পরিবেশেই সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচনের ফলাফলও ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে ১৭৮টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ২২ পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির প্রার্থী একটি পৌরসভায় লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছেন। অন্যান্য প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ২৭টিতে। ৬ টি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন পৌরসভার ৩৪টি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে।  এর আগে ৭টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ  মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌর নির্বাচনে কারসাজির অভিযোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে বিতর্কিত করতেই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের মতে, পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তবে  প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ নির্বাচনোত্তর প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচনী সংস্কৃতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন আনার যে তাগিদ দিয়েছেন এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।

আমাদের দেশে প্রধান সমস্যা হচ্ছে নির্বাচনী ফলাফল মেনে না নেওয়ার সংকট। সবাই তালগাছটা নিজের করে চায়। এতে করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার একটি চেষ্টা থাকে সকল পক্ষ থেকেই। এছাড়া নির্বাচনী সংঘাত, সংঘর্ষ, প্রভাব বিস্তার এগুলো যেন নির্বাচনী সংস্কৃতির অংশই হয়ে গেছে। একদিকে নির্বাচন কমিশনের ওপর দায় চাপানো হয় অন্যদিকে যার যেখানে প্রভাব আছে সেটি তারা দেখাতে কার্পণ্য করেন না। শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে একটি সুষ্ঠূ নির্বাচন উপহার দেওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ যদি সংশ্লিষ্ট সকলে কমিশনকে সহযোগিতা না করেন। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চললে কোনো সংকটই হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন এমনটি বলা যাবে না। তবে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচন কমিশনকেই জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।অপরদিকে শুধু নির্বাচন নয় স্থানীয় সরকারকে সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য প্রশাসনকে বিকেন্দ্রিকরণের মানসিকতা থাকতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা যেন এলাকার উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রথমবারের মত দলীয় ভিত্তিতে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে প্রার্থী, ভোটার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন সবার কাছেই ছিল এটি নতুন অভিজ্ঞতা। এই নির্বাচন থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় একটি গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসার জন্য যা অত্যন্ত জরুরি।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।