বছরের সেরা আবিস্কার মুস্তাফিজ-সৌম্য


প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

দেখতে দেখতে প্রায় শেষ ২০১৫ সাল। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে ইতিহাসের পাতায় স্মরনীয় হয়ে থাকবে এ বছরটি। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা বছর পার করলো বাংলাদেশ। এই সেরা সময়ের সেরা আবিস্কার নিঃসন্দেহে মুস্তাফিজুর রহমান। তারপর আসবে সৌম্য সরকারের নাম। অভিষেকের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে চলেছেন এই দুই নতুন তারকা। তবে সৌম্য-মুস্তাফিজের উজ্জ্বল আলোর পাশে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে নজর কেড়েছেন আরও দুই নবীন। বিপিএল দিয়ে আবু হায়দার রনি এবং আর জাতীয় ক্রিকেট লিগ দিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। পাশাপাশি এই বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটের আবিস্কার বলা যায় লিটন কুমার দাসকে। যদিও যতটা প্রতিভাবান ভাবা হয় তাকে, ততটা আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। সাব্বির রহমানের আবিস্কার আরও আগে। তবে, ২০১৫ সালটা স্মরনীয় হয়ে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমিদের কাছে, নিজেকে আলাদা করে চেনানোর জন্য। ক্রিকেটে বছরের সেরা আবিস্কারগুলো নিয়ে জাগোনিউজ২৪.কমের পাঠকদের সামনে এবারের বিশেষ আয়োজন। তৈরী করেছেন রামিন তালুকদার...

মুস্তাফিজুর রহমান

Mostafiz

টি-টোয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেদিন আফ্রিদি-হাফিজদের নাকানি-চুবানি খাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আফ্রিদিরমত গ্রেট ক্রিকেটারের উইকেট দিয়েই মুস্তাফিজের শিকার শুরু। অফ কার্টার, অন কার্টার- যেন কার্টারের সমারোহ তার হাতে। সঙ্গে স্লোয়ার, ইয়র্কার তো আছেই। সাৎক্ষীরার অজ-পাড়া গাঁ থেকে উঠে আসা ২০ বছর বয়সী এই পেসারের হাতের তালুতে যে কী আছে, এখন রীতিমত গবেষণার বিষয়। ওয়াসিম আকরাম যেমন ওভারের ৬টি বল ৬ রকম করতে পারতেন, মুস্তাফিজও তেমনি। তার কার্টার আর স্লোয়ারে দিকভ্রান্ত বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংকে মুস্তাফিজকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রতিপক্ষ তাকে কিভাবে রিড করবে? সে তো একএক ম্যাচে একএকটি তীর নিয়ে হাজির হন!’

অনেকটা রূপকথার মতই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল মুস্তাফিজ নামক বাংলাদেশের ক্রিকেট নক্ষত্রের। তিন পেসার নিয়ে খেলতে নামা যেখানে বিস্ময় ছিল বাংলাদেশের জন্য, সেখানে প্রতিশোধের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে চার পেসার নিয়ে খেলতে নামলেন মাশরাফি! সেদিন বাংলাদেশের একাদশ দেখে বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। একাদশে চার পেসার দেখে সেদিন যারা সমালোচনার তূনে ধার দিচ্ছিলেন, ম্যাচ শেষেই তারাই করেছেন প্রসংশা।

ভারতীয় শিবিরকে স্তব্ধ করে দিয়ে মুস্তাফিজ একাই তুলে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। ম্যাচের মাঝপথে ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন মুস্তাফিজকে। যে কারণে মাঠের বাইরেই চলে যেতে হয়েছিল তাকে। পরে যখন ফিরলেন, তখন একাই এক ধাক্কায় পুরো ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে দিলেন। পরের ম্যাচে আরও একধাপ এগিয়ে। ছয় উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মত ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ এনে দেন বাংলাদেশকে। বিষাক্ত কাটার দিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

টেস্ট অভিষেকেও দারুণ উজ্জ্বল মুস্তাফিজ। চার উইকেট পেলেও মূল্যবান সময়ে ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। এক ওভারে পরপর চার বলে নিয়েছেন তিন উইকেট। হাশিম আমলা, ডু প্লেসিসের উইকেট নেয়ার পর কুইন্টন ডি ককের স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেয়ার দ্যৃশ এখনও সবার চোখে ভাসে। সে সঙ্গে রেকর্ড বুকের ক্ষুদ্র পাতায় বড় করেই নাম লিখে নিলেন দেশ সেরা এই পেসার। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সংস্করণেই অভিষেক ম্যাচে সেরা হওয়া একমাত্র খেলোয়াড় হলেন মুস্তাফিজ।

প্রতিভার স্বীকৃতি পেতে তখনও বুঝি বাকি ছিল! যেটা আসলো বছরের শেষ সময়ে। আইসিসির বর্ষসেরা একাদশে তালিকায় প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ঠাঁই পেয়ে গেলেন তিনি। যদিও আইসিসির বর্ষসেরা পুরস্কারের তালিকায় উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জশ হ্যাজালউড। হয়তো বা আর কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে পুরস্কারটি পেতে পারতেন মুস্তাফিজুর রহমানও। চলতি বছরে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৩৪টি ইনিংসে বল করে হ্যাজালউডের উইকেট সংখ্যা ৬৮টি। আর মাত্র ১৬ ইনিংস বল করে মুস্তাফিজ উইকেট পেয়েছেন ৩৬টি।

সৌম্য সরকার

sarkar

একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা করেছিলেন সৌম্য সরকার; কিন্তু মাঠে তার খেলা দেখে মনে হয়নি মাত্র ক’দিন আগেই অভিষেক হয়েছে এই বাঁ-হাতির। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৬ ম্যাচে ১৭৫ রান করেন সৌম্য। তবে ব্যাট হাতে তার বিধ্বংসী রূপটা প্রথম দেখেছে পাকিস্তান। প্রথম দুই ম্যাচে বড় স্কোর করতে না পারলেও শেষ ওয়ানডেতে দারুণভাবে জ্বলে ওঠেন তিনি। ১১০ বলে ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা দেন সৌম্য।

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাও দেখেছে তার বিধ্বংসী রুপ। দুটি অনবদ্য ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ এনে দেন সৌম্য। পরপর দুই ওয়ানডেতে তার ব্যাট থেকে আসে ৮৮ ও ৯০ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার রান আরেকটু বেশি হলে হয়তো সেঞ্চুরির দেখা পেতেন এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান।

আবু হায়দার রনি

rony

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরের আবিষ্কার আবু হায়দার রনি। বিপিএলের শুরু থেকেই নিজের জাত চেনান তিনি। তরুণ এই বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার টুর্নামেন্টের মাঝপথেই চলে আসেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের প্রতিযোগিতায়। ১২ ম্যাচে ১৫.০৪ গড়ে ঝুলিতে পুরেছেন ২১ উইকেট। তবে উইকেট সংগ্রহই নয়। তার মাঝে রয়েছে আগ্রাসী মনোভাব, যা একজন পেস বোলারদের জন্য খুবই জরুরি। এছাড়া এই বয়সেই টেম্পারামেন্টে দারুণ এগিয়ে এই প্রতিভাবান বাঁ-হাতি। বলে দানবীয় গতি না থাকলেও দারুণ লাইন-লেন্থ বজায় রেখে বল করে যেতে পারেন এই পেসার। দারুণ স্লোয়ার দেয়ার পাশাপাশি শুরু থেকেই করতে পারেন করতে পারেন বিধ্বংসী ইয়র্কার। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, দলের সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল কিংবা মুশফিকুর রহিমরা প্রশংসা করেছেন তার এবং রনির মধ্যে আগামী দিনের বড় তারকার ছায়াও দেখতে পাচ্ছেন তারা।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত

mosaddek

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন অনেক বড় বড় নাম রয়েছে। রথী-মহারথি ক্রিকেটারের ছড়াছড়ি। তবে তারা যা পারেননি তা করে দেখিয়েছেন ১৯ বছরের তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। চলতি বছরে ৮টি প্রথম শ্রেনীর ম্যাচ খেলে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম আলো ছড়িয়েছিলেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান। জাতীয় লিগে রংপুরের বিপক্ষে খেলেছিলেন ২৫০ রানের ইনিংস। এরপর খেললেন চট্টগ্রামের বিপক্ষে ২৮৭ রানের অনবদ্য ইনিংস। এতেও ক্ষ্যান্ত হননি এই তরুণ তুর্কি। সিলেটের বিপক্ষে বরিশালের হয়ে অপরাজিত ২০০ করে আগের ম্যাচে ট্রিপল সেঞ্চুরির আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন। একই সাথে করে ফেলেন প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসাবে ৩টি ডবল সেঞ্চুরীর কীর্তি। তবে গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই প্রথম আলোর ঝলক দেখিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। ব্যাটিংয়ে ১৮৭ রান করার পাশাপাশি বোলিংয়েও পেয়েছিলেন ১১টি উইকেট!

আরটি/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।