বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে যশোরে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন
বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্যে দিয়ে বুধবার যশোরের ছয় পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণ ও ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠলেও বড় ধরনের কোনো সহিংসতা হয়নি। যশোরের পৌরসভাগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র উঠেছে এসেছে।
যদিও বিএনপির প্রার্থী মারুফুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, যশোরের ১৯টি কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হয়েছে। একই অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামান চুন্নু ওই কেন্দ্রগুলোতে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। তিনি বলেছেন, পরাজয় বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপি এসব অপপ্রচার করছে।
যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাছ আলী জাগো নিউজকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেলস্টেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দুটি করে চারটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। পরে পুলিশের মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই সময়ে জিলা স্কুল কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স টেনে খুলে ফেলে দেয়ার সময় ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট রোমানা ইসলামকে আটক করা হয়েছে। এর পরপরই ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দুপুরে বিসিএমসি কলেজ কেন্দ্রের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর বিস্ফোরণকারীরা কলেজের সামনে নৌকা প্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চৌগাছা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসময় ককটেল নিক্ষেপকারীকে ধরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়েছে।
কেশবপুর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আবদুস সামাদ বিশ্বাসের সমর্থকদের হামলায় উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেন ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী মানিক আহত হয়েছেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেশবপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ভোগতি কেন্দ্রে ভোট পর্যবেক্ষণে গেলে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম পিটুকে অবরুদ্ধ করে রাখে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এর আগে সকাল পৌনে ৯টায় যশোর পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের সেবা সংঘ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে নারীদের একটি লম্বা লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নূর জাহান বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ভোট কেন্দ্রে আসতে কেউ বাঁধা দেয়নি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহি বেগম ও হালিমা বেগম নামের আরেকজন ভোটার বলেন, কোনো হুমকি ধামকি নেই। ভোট দিতে এসেছি। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবো।
এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে জানান, সকাল ৮টা থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দিনের প্রথম দিকে ভোটার উপস্থিতি কম হলে বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়ছে।
তবে দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মারুফুল ইসলাম। তিনি দাবি করেছেন, যশোর পৌরসভার ১৯টি কেন্দ্রে নৌকা সমর্থকরা ভোট কেটে নিয়েছেন। একই অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম কামরুজ্জামান চুন্নু। তিনি এই কেন্দ্রগুলোর ভোট পুনরায় গ্রহণের দাবি করেছেন। যদিও এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু।
তিনি বলেছেন, নির্বাচনী মাঠে নেমে বিএনপি যখন বুঝতে পারে জয়লাভের সম্ভাবনা নেই। তখনই তারা এসব অপপ্রচার শুরু করে। এবারও নির্বাচনের শেষপর্যায়ে পরাজয় বুঝতে পেরে তারা এসব উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার করছে।
যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জাগো নিউজকে বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টরা কিছু কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তবে পুলিশের তৎপরতায় নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে।
মিলন রহমান/এমজেড/এমএস