মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত জাহাঙ্গীর আলম
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুরের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে দাখিল হয়েছিল। সেগুলোকে পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। যেহেতু আইন অনুযায়ী কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বিশেষ করে মেয়রের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আসে এবং তা যদি তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আমলে নেওয়া হয় তাহলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে কারণে মেয়র জাহাঙ্গীরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী, জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কি জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আছে। বেশ কয়েকটি অভিযোগ আছে। সেসব যেহেতু তদন্ত হবে তখন আপনারা জানতে পারবেন। অভিযোগ যেমন কোথাও অবৈধভাবে জায়গা দখল করা, জনগণের স্বার্থপরিপন্থি কাজ করা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, সেখানে অনেক অবকাঠামো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, জোর-জবরদস্তি করা, এ ধরনের কিছু অভিযোগ এসেছে।’
স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির কোনো অভিযোগ এসেছে কি না জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক সে যেই হোক না কেন, কথা বলা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ। এটাকে একজন নাগরিক হিসেবে আমি ঘৃণা করি। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যিনি বাংলাদেশকে স্বীকার করেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা না করার কোনো কারণ নেই। যারা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করবেন না, সে তো বাংলাদেশকেই স্বীকার করে না। সেই কারণে আমরা সবাই জানি, আপনারাও জানেন, সেই অভিযোগটা দলের কাছে দিয়েছে এবং দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
‘আইন অনুযায়ী আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আছে। সেই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি দায়িত্বপালনে যদি গর্হিত কাজ করে সেসব ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের দেওয়া আছে। সেই ক্ষমতাই আমরা প্রয়োগ করছি। আইনে আমাদের যেসব অপশন দেওয়া আছে সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
গাজীপুরে তিন সদস্যের মেয়র প্যানেল গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যিনি জ্যেষ্ঠতার বিচারে এক নম্বরে আছেন, তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্বপালন করবেন। তাকেই দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।’
তদন্ত শেষ হবে কবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমলে নিয়েছি। এখন তদন্ত শুরু হবে অনতিবিলম্বে। তদন্ত করতে মাঠপর্যায়ে কতদিন লাগবে সেটা এখনই বলা যাবে না। হয়তো বেশি সময় লাগতে পারে। আরও নতুন বিষয়ও যোগ হতে পারে।’
জাহাঙ্গীর আলম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে যে চার্জগুলো গঠন করা হবে, আমরা তদন্ত করে যেগুলো পাবো, সেসব বিষয়ে তাকে শোকজ করা হবে। প্রত্যেক নাগরিকের আত্মপক্ষ সমর্থনের সাংবিধানিকভাবে অধিকার আছে। সেই অধিকার তিনিও ভোগ করতে পারবেন।’
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে অপসারণ করা হবে।’
‘আজ আমরা বহিষ্কারাদেশ জারি করছি। পত্রপ্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে নতুন ভারপ্রাপ্ত মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এর মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে’ বলেন তাজুল ইসলাম।
সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি
পরে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এতে বলা হয়, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতি বছর হাট বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়া ভূমি দখল ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া রাস্তা প্রশস্তকরণ সংক্রান্ত প্রাপ্ত অভিযোগটির বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মতামত জানতে চাওয়া হলে অদ্যাবধি কোনো মতামত প্রদান করা হয়নি।’
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘এই অভিযোগসমূহ- ক্ষমতার অপব্যবহার, বিধিনিষেধ পরিপন্থী কার্যকলাপ, দুর্নীতি ও ইচ্ছাকৃত অপশাসনের শামিল যা করপোরেশন আইনের ধারা ১৩ (১) (ঘ) অনুযায়ী অপসারণযোগ্য অপরাধ। এসব অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে ২০০৯ সালের সিটি করপোরেশন আইনের ধারা ১৩ ধারা মতে অপসারণের কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়েছে। তাই সিটি করপোরেশন আইনের ধারা ১২ (১) অনুযায়ী, সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’
সিটি করপোরেশন আইনের ধারা ১২ (২) অনুযায়ী এই আদেশ প্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন সদস্যের মেয়র প্যানেল
অপর আদেশে তিন সদস্যের মেয়র প্যানেল গঠন করে অফিস আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ধারা ২০ (২) এর বিধান অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তিন কাউন্সিলরের সমন্বয়ে এই প্যানেল গঠন করা হয়।
মেয়র প্যানেলে মনোনীত হয়েছেন- ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরন, ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুল আলীম মোল্লা ও ১০ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোসা. আয়েশা আক্তার।
আরএমএম/এআরএ/জিকেএস