তিন সদস্যের প্যানেল মেয়র গঠন, ‘বরখাস্ত হচ্ছেন’ জাহাঙ্গীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২১
ফাইল ছবি

দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকেও বরখাস্ত হচ্ছেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। ইতোমধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে তিন সদস্যের প্যানেল মেয়র গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। আজকের মধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সেখানে একজনকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, মূলত সিটি করপোরেশন গঠনের প্রথম বৈঠকেই প্যানেল মেয়র গঠন করতে হবে। কিন্তু সেখানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে, সেখানে প্যানেল মেয়র গঠন করা হয়নি। সেজন্য তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে তিন সদস্যের প্যানেল মেয়র গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আইনে বলা আছে কোনো সিটি করপোরেশন প্যানেল মেয়র গঠনে ব্যর্থ হলে মন্ত্রণালয় সেটি গঠন করে দেবে। আর মেয়র বরখাস্তের বিষয়ে আমরা আইনকানুন বিশ্লেষণ করছি। যখন হবে তখন জানতে পারবেন।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের নিয়ে একটি মন্তব্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গত ১৯ নভেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের তথ্য জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট করতে ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করা হয়। তখন শুধু দলীয় প্রতীক ও প্রার্থিতার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। মেয়র পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। করপোরেশন আইনেও এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে ‘মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাময়িক বরখাস্তকরণ’ অংশে বলা হয়েছে- ১২ (১) সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে ক্ষেত্রমতো মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।

১২ (২) উপ-ধারা (১) এর অধীনে সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়রকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হলে সেই আদেশপ্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্ত মেয়র, ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। মেয়রের বিরুদ্ধে আনা আইনি কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত, অথবা সেই মেয়র অপসারিত হলে, তার পরিবর্তে নতুন মেয়র নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

মেয়র এবং কাউন্সিলরদের অপসারণের বিষয়ে আইনে বলা হয়েছে-
১৩ ধারায় (১) মেয়র অথবা কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন, যদি তিনি-
(ক) যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন। অথবা
(খ) নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হন।
(গ) দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করেন অথবা শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন।
(ঘ) অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন।
(ঙ) নির্বাচনের অযোগ্য ছিলেন মর্মে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন মাসের মধ্যে প্রমাণিত হয়।
(চ) বার্ষিক ১২টি মাসিক সভার পরিবর্তে ন্যূনতম ৯টি সভা গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া অনুষ্ঠান করতে বা ক্ষেত্রমতো, সভায় উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হন।

এখানে ‘অসদাচরণ’ বলতে ক্ষমতার অপব্যবহার, এ আইন অনুযায়ী বিধি-নিষেধ পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অসদুপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন, নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করা বা অসত্য দেওয়াকে বোঝাবে।

আইনে আরও বলা আছে, অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে বিধি অনুযায়ী তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়র বা কাউন্সিলরকে পদ থেকে অপসারণ করা হলে, ওই আদেশের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপসারণের আদেশ স্থগিত থাকবে। সব পক্ষকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে রাষ্ট্রপতি ওই অপসারণের আদেশ পরিবর্তন, বাতিল বা বহাল রাখতে পারবেন। আপিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির আদেই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

অপসারিত কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের কার্যকালের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না। তবে দল থেকে বহিষ্কার হলে কী করা হবে সে বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই।

আইএইচআর/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।