বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ১২ বছর পর এলো জরিমানার নোটিশ!
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চালকল মালিক ছিলেন মহাদেব চন্দ্র সাহা। একসময় আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংযোগ বন্ধও করা হয়। এ ঘটনার ১২ বছর পর মহাদেবের চালকলের বৈদ্যুতিক যন্ত্র নষ্টের অভিযোগ এনে মূল্য পরিশোধের নোটিশ পাঠিয়েছে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিস।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, নষ্ট যন্ত্রের মূল্য পরিশোধ না করলে জামানত থেকে মূল্য কেটে নেওয়া হবে।
ভূরুঙ্গামারী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ওই নোটিশ থেকে জানা যায়, উপজেলার দেওয়ানের খামার গ্রামের মেসার্স অভি চালকলের মালিক মহাদেব চন্দ্র সাহার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ অফিস তার নামের ৩১৬-১০৩০ হিসাব নম্বরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল। একই সঙ্গে সংযোগের বৈদ্যুতিক মিটার, সকেট, সংযোগ তারসহ (সার্ভিস ড্রপ সংক্ষেপে এসডি) তিনটি বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (কারেন্ট ট্রান্সফরমার, সংক্ষেপে সিটি) খুলে নেওয়া হয়। অডিটের সময় তিনটি বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (সিটি) নষ্ট চিহ্নিত হয়। যার মূল্য ধরা হয় প্রতিটির ৫ হাজার ২০৬ টাকা করে সর্বমোট ১৫ হাজার ৬১৮ টাকা।
চালকল মালিক মহাদেব চন্দ্র সাহা এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ অফিস প্রায় ১২ বছর আগে চালকলের বৈদ্যুতিক মিটার, সকেট, সংযোগ তার (এসডি) ও তিনটি বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (সিটি) খুলে নিয়ে যায়। চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে ভূরুঙ্গামারী বিদ্যুৎ অফিস এক যুগ আগে খুলে নেওয়া ওই তিনটি বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নষ্টের অভিযোগ এনে মূল্য বাবদ ১৫ হাজার ৬১৮ টাকা পরিশোধের নোটিশ পাঠিয়েছে। মূল্য পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার সময় জমা দেওয়া ফেরৎযোগ্য জামানত থেকে ওই তিনটি যন্ত্রের মূল্য কেটে নেওয়া হবে বলে তারা জানায়।
তিনি দাবি করে বলেন, বিদ্যুৎ অফিস যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (সিটি) খুলে নিয়ে গিয়েছিল তখন সেগুলো সচল ছিল। যন্ত্রগুলো দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ অফিসে ফেলে রাখার কারণেই নষ্ট হয়েছে অথবা কেউ সুকৌশলে সেগুলো সরিয়ে সেখানে নষ্ট যন্ত্র রেখে দিয়েছে। যন্ত্রগুলো নষ্টের জন্য আমি কোনোভাবেই দায়ী নই। বিদ্যুৎ অফিস অন্যায়ভাবে আমার ফেরৎযোগ্য জামানত কেটে নিতে চাচ্ছে।
মহাদেব চন্দ্র সাহা আরও বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের অডিট কি একযুগ পর পর হয়? যদি তা না হয় তবে আগের অডিটগুলোতে কেন যন্ত্র নষ্টের বিষয়টি উল্লেখ করা হলো না। নোটিশে অডিটের বিষয় উল্লেখ করা হলেও অডিটের তারিখ বাদ দেওয়া হলো কেন। যন্ত্র নষ্টের বিষয়টি গ্রাহক হয়রানি ছাড়া কিছুই না। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের এভাবেই হয়রানি করছেন।
ভূরুঙ্গামারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কাওসার আলী জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরই অডিট কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে অনেক সময় পাঁচ থেকে ছয় বছর অন্তর অন্তর অডিট হয়। ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিসে অডিট সম্পন্ন হয় ২০১৮ সালে। সেই অডিটে অভি চালকলের সিটি নষ্টের বিষয়টি ধরা পড়ে। তাই নষ্ট সিটির মূল্য পরিশোধ করতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। যখন সিটি খুলে আনা হয়েছিল তখন যারা খুলে এনেছেন হয়তো পরীক্ষা ছাড়াই খুলে এনেছিলেন।
প্রতি বছর অডিট হলে আগের অডিটে সিটি নষ্টের বিষয় ধরা পড়লো না কেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ভূরুঙ্গামারী জোনাল অফিস আগে নাগেশ্বরী জোনাল অফিসের আওতায় ছিল। এছাড়া বিষয়টি আমার দায়িত্ব গ্রহণের অনেক আগের ঘটনা তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
মো. মাসুদ রানা/এএ/জেআইএম