বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৫ পিএম, ০১ নভেম্বর ২০২১

রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রিকারী এক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। চক্রটি বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে আসছিল।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন সায়েদাবাদ এলাকা থেকে এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অস্ত্র এবং ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- চট্টগ্রামের বৈধ অস্ত্রের দোকানের মালিক মো. হোসেন, রাঙ্গামাটির হ্যাডম্যান লালতন পাংখোয়া এবং চট্টগ্রাম এলাকার মো. হোসেনের দুই সহযোগী আলী আকবর ও আদিলুর রহমান।

সোমবার (১ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানায় অভিযান শুরু করে। সেসময় সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকার ৩৩/১ জনপথ মোড়ে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

jagonews24

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মো. হোসেন বৈধ অস্ত্রের একজন ডিলার। চট্টগ্রামে তার একটি অস্ত্রের দোকান রয়েছে। এ দোকান ব্যবহার করে বৈধ অস্ত্রের ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করতেন। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন।

তিনি আরও বলেন, সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো আমরা নিজেরাও অবাক হয়েছি। মো.হোসেন বিভিন্ন পুরাতন লাইসেন্স সংগ্রহ করেন। যারা বৈধ অস্ত্র আগে ব্যবহার করতেন এখন মারা গেছেন, আবার কেউ কেউ এই অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না- তাদের কাছ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন। এইসব লাইসেন্স দিয়ে অস্ত্র ক্রয় করে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া শটগানটিও এরকম একটি লাইসেন্সের বিপরীতে ক্রয় করা।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, লালতন পাংখোয়ার বাড়ি রাঙ্গামাটির বরককলের সাইচালে। তিনি বড়কল এলাকার সাইচাল পাংখোয়া পাড়ার হেডম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবনের মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে অস্ত্র-গুলি চোরাচালানে জড়িত। এসব অস্ত্র তিনি পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন।

মো.হোসেন পাংখোয়া ছাড়াও ঢাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী স্বপনসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের থেকে অস্ত্র-গুলি ক্রয় করতেন। সেসব অস্ত্র আকবর এবং আদিলুর রহমান সুজনের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন।

আদিলুর রহমান সুজন মো. হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা দীর্ঘদিন ধরে হোসেনের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র-গুলি কিনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। এরা আবার অবৈধ অস্ত্র-গুলি চট্টগ্রামের হামিদুল হক, আবদুল মান্নান আহমেদ, কক্সবাজারের সেলিম ও জুয়েলের কাছে বিক্রি করতেন।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক নাম পেয়েছি। যাদের কাছ থেকে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করতেন এবং যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করতেন। আদালতের মাধ্যমে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো বলে আশা করছি।

jagonews24

তিনি বলেন, মরা আশঙ্কা করছি তারা ইতিপূর্বে অনেক অস্ত্র ও গুলি বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করেছেন। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা পুনরায় অভিযান চালাবো। গ্রেফতারদের কাছ থেকে পাওয়া একে-৪৭ এর গুলি বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী তাদের কাছে অর্ডার করেছিল বলে ধারণা করছি। কার কাছে একে-৪৭ এর গুলি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন সেগুলো আমরা জানার চেষ্টা করছি। আমাদের ধারণা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও কক্সবাজারের বড় কোনো সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে।

ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এত বড় অস্ত্রের চালান নিয়ে আসতে পারা নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলে, যে চারজন এসেছেন তারা আলাদা আলাদা ভাবে এসে এখানে মিলিত হয়েছেন। তবে অবশ্যই এটা হুমকি তো বটেই। অস্ত্রগুলো বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংগঠিত করার জন্য ব্যবহার হতে পারতো। যেটা আমাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতো।

কতজনের কাছে এখন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই ব্যবসা করে আসছেন। এসব বিষয় সামনে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে এসব নাম পাব।

গ্রেফতার সবাই বাংলাদেশের নাগরিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। গ্রেফতারের সময় অস্ত্রগুলো তাদের ব্যাগের মধ্যে ছিল। তিনজনের কাছে আমরা অস্ত্র পেয়েছি, আরেকজনের কাছে গুলি পেয়েছি।

এএএম/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।