হাতিয়ায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের মধ্যে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা
পোস্টার ছেঁড়া, মাইক ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলার মধ্যে দিয়ে চলছে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ায় পৌর নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। পৌর নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য প্রার্থীদের বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির পাাশাপাশি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে একের পর এক সহিংস ঘটনায় প্রার্থীরা যেমন একের দোষ অন্যের উপর চাপাচ্ছেন পাশাপাশি ভোটার ও সুষ্ঠু ভোট দানের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন।
চারদিকে মেঘনা নদী বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে ২০০৫ সালে হাতিয়া পৌরসভা গঠিত হয়। চর ঈশ্বর, তমরুদিন, বুড়িরচর, লক্ষ্মীদিয়া, গুল্লাখালী গ্রাম নিয়ে ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে `গ` শ্রেণির এ পৌরসভাটির ২০১১ সালে প্রথম পৌর নির্বাচন হয়। এতে একেএম ইউছুফ আলী হাতিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র হন। বর্তমানে পৌরসভার জনসংখ্যা ৫১ হাজার ২৪৬ জন। হাতিয়া পৌরসভায় ৬ মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ১০ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটার সংখ্যা পুরুষ ও নারীসহ মোট ২৭ হাজার ৬১৩ জন।
সরজেমিনে হাতিয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, পোস্টার ব্যানারে চেয়ে গেছে গোটা পৌর এলাকা। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ থেকে এবারও মেয়র পদে বর্তমান মেয়র একেএম ইউছুফ আলীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। বর্তমান এমপি আয়েশা ফেরদাউস, সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটনের আর্শীবাদ নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাগো নিউজকে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী একেএম ইউছুপ আলী বলেন, বিগত বছরগুলোতে তিনি হাতিয়া পৌরসভার অনেক উন্নয়ন করেছেন। ইতোমধ্যে আরও কিছু উন্নয়নমূলক কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি রাজনীতি করে আসছেন। তার প্রতি মানুষের অগাধ ভালোবাসা, দোয়া ও সহযোগিতা রয়েছে বিধায় তিনি এবারও দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে মেয়র পদে ভোট করেছন। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তাকে আবারও ভোটারগণ মেয়র পদে নির্বাচিত করবেন।
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, পৌরসভায় একটি দুষ্টু চক্র রয়েছে যারা পৌরবাসীর উন্নয়ন চায় না। বিশেষ করে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী ছাইফ উদ্দিন আহাম্মদকে (জগ প্রতীক) ইঙ্গিত করে বলেন, তার লোকজন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। এরই মধ্যে তার অনেক কর্মী-সমর্থকের ওপর হামলা চালিয়েছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী এনে সুষ্ঠু ভোট দানের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট ছাইফ উদ্দিন আহাম্মেদ মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জগ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। ২০১১ সালে তিনি নির্বাচন করে পরাজিত হন। অ্যাডভোকেট ছাইফ উদ্দিন আহম্মেদ একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা মরহুম জিয়াউল হক তালুক মিয়া এক সময় হাতিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। মাঠ পর্যায়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় সহোদর ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ রয়েছেন।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, পৌরবাসীর পানি, বিদ্যুৎ ও রাস্তাঘাটের সমস্যা সমাধান কল্পে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে তিনি হাতিয়া পৌরসভায় সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী একে এম ইউছুপ আলীর কর্মী-সমর্থকরা তার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা থেকে শুরু করে মাইক ভাংচুর ও একের পর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া জলদুস্যু ওবনদুস্যু বাহিনীর লোকজন এনে ভোটারদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন কেন্দ্রে না যায়। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে জানানোর পর তারা কোনো কার্যকরী উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো তার কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। ভোটে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী হেরে যাবেন এটি বুঝতে পেরে তারা সুষ্ঠু ভোটদানের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
আওয়ামী ঘরের মেয়র পদে দুই প্রার্থীর অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্যে ২০ দলীয় জোটের মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাজী আবদুর রহিমও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন। তবে তিনি ও আশঙ্কা করছেন বিগত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে উপজেলা নির্বাচনের মতো পৌরসভার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ভোটারগণ তাদের মতামত দিতে পারবে না। তিনি গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে হাতিয়া পৌর নির্বাচনের দিন সেনবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান।
নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের উৎকণ্ঠার পাশাপাশি ভোটাররা রয়েছেন শঙ্কিত। হাতিয়ায় আওয়ামী লীগ দুটি ভাগে বিভক্ত। পাশাপাশি রয়েছে বিএনপি। এ বড় দুটি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ভোটের দিন তারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কিনা?। তবে তারা যদি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন তাহলে তারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন। যাকে দিয়ে এ অবহেলিত পৌরসভার উন্নয়ন হয়।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌর নির্বাচনের রিটানিং অফিসার আবু হাসনাত মো. মাঈনউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। ভোটের দিন পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড মোতায়েনের পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাব সদস্য মোতায়েনের জন্য নির্বাচন কমিশনে পত্র দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগ পেয়ে তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘদের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ১৩টি ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে ৭টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
মিজানুর রহমান/এসএস/পিআর