কুমিল্লার ঘটনায় উসকানিমূলক পোস্ট দিতেন আশিস
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে আশিস মল্লিক (৩০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব বলছে, অভিযুক্ত আশিস মল্লিক প্রতিটি পোস্টে হ্যাশ-ট্যাগ ব্যবহার করে এই দেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তিনি পাশের দেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন নৃশংস ঘটনার ভিডিও আপলোড করে জনমনে ভয়ভীতি তৈরিসহ উসকানি দিচ্ছিলেন।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে মিথ্যা অপপ্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বনানী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতার আশিস সাইবার অপরাধের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। আশিস মল্লিকের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছিলেন।
লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, গত ১৬ অক্টোবর একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে ওই গ্রুপে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য পোস্ট করে আসছিলেন আশিস। তিনি নিজে ওই গ্রুপের অ্যাডমিন ও তার সমমনা আরও কয়েকজনকে অ্যাডমিন হিসেবে নিযুক্ত করেন। দ্রুত গ্রুপের সদস্য কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই ফেসবুক গ্রুপ থেকে কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়া হচ্ছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও সহিংসতা বিস্তার করার অপতৎপরতা চলছিল।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এছাড়া ওই ফেসবুক গ্রুপে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন নৃশংস ঘটনার ভিডিও আপলোড করে জনমনে ভয়ভীতি তৈরিসহ উসকানি দেওয়া হচ্ছিল। অভিযুক্ত আশিস মল্লিক প্রতিটি পোস্টে হ্যাশ-ট্যাগ ব্যবহার করে এই দেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
আশিস ওই ফেসবুক গ্রুপ থেকে যে ধরনের উসকানিমূলক ও মিথ্যা পোস্ট প্রচার করতেন-
>পার্বত্য জেলার একজন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে পোস্ট করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের হুমকি দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান।’
>নোয়াখালীতে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে পায়ের রগ কেটে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন বলে অপপ্রচার করা হয় ওই ফেসবুক গ্রুপে।
>পূর্বের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় পঞ্চগড় ও গাইবান্ধায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর পুড়ে যাওয়াকে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে অপপ্রচার করা হয়।
>চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গভীর রাতে কয়েকটি পরিবারে অগ্নিসংযোগ ও উপজেলার ৫ নম্বর গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গুপ্টি গ্রামে বসবাসরত বীরেশ্বর কর্মকারের বাড়িতে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে আগুন দেওয়া হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই দেশে জন্মই যেন অভিশাপ। এ বক্তব্য লিখে অভিযুক্ত তার ফেসবুকে প্রচার করেন ও সাম্প্রদায়িক উসকানি দেন।
>গত কয়েকদিনের চলমান অপ্রীতিকর ঘটনায় চাঁদপুর ও নোয়াখালীতে নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অপপ্রচার করা হয়।
>রংপুরের ঘটনাকে ১৯৭১ সালের পুনরাবৃত্তি বলে তুলনা করা হয়।
>সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে উসকানিমূলক ও ভুল তথ্য দেওয়া হয়।
এ ধরনের অপপ্রচার অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে সহিংসতার জন্ম দিতে পারে বলেও জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
টিটি/এমআরআর/এএসএম