শরণার্থীদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করুন : আয়লানের বাবা
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্ক সৈকতে মরদেহ ভেসে ওঠা শিশু শরণার্থী আয়লানের বাবা আব্দুল্লাহ কুর্দি। বড়দিন উপলক্ষ্যে চ্যানেল ফোরকে দেয়া এক স্বাক্ষাতকারে তিনি এ আহ্বান জানান। আব্দুল্লাহ কুর্দি বলেন, আমার বার্তা হচ্ছে, সিরিয়ান শরণার্থীদের জন্য বিশ্বের দরজা উন্মুক্ত করুন। খবর আলজাজিরা ও ইন্ডিপেন্ডেন্টের।
২ সেপ্টেম্বর তুরস্কের বোদরাম সমুদ্র সৈকতে ভেসে ওঠে কুর্দির তিন বছর ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলে আয়লান কুর্দি ও গালিপ এবং স্ত্রী রেহানের মরদেহ। ওই দিন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল দেশটির ১২ নাগরিক। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয়ের আশায় যেতে চেয়েছিল গ্রিসে। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি তারা। সিরিয়ান শরণার্থীদের ১২ জনই মারা যান।
ওই ঘটনায় শিশু আয়লানের উজ্জ্বল লাল রংয়ের একটি টি-শার্ট ও নীল রংয়ের হাফ প্যান্ট পরে সাগরের তীরে বুকে ভর দিয়ে শুয়ে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবিতে দেখা যায়, তুরস্কের এক পুলিশ কর্মকর্তা শিশুটিকে উদ্ধার করছেন।
পরে শরণার্থী ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। সিরিয়ায় গত সাড়ে চার বছরের গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে আড়াই লাখ মানুষের। এছাড়া ৪০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এসব শরণার্থীদের অধিকাংশই আশ্রয়ের আশায় ইউরোপের দিকে ছুটছেন। বড়দিন উপলক্ষে এক বার্তায় আয়লানের বাবা বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি কারো সামনে দরজা বন্ধ করে দেয়, এটি অত্যন্ত কঠিন। যখন একটি দরজা খুলে দেয়া হয়, তখন তারা (শরণার্থীরা) অপমানবোধ করবে না।
বছরের এই সময় এসে একজন আতঙ্কিত বাবা-মা ও শিশুর পক্ষ থেকে আমি সবার কাছে নিরাপত্তা ও শান্তির আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আপনাদের কাছ থেকে শুধুমাত্র একটু সহানুভূতি প্রার্থনা করছি। বড়দিন উপলক্ষে সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী বছর সিরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। বিশ্বের সর্বত্রই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
এদিকে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, চলতি বছরে ইউরোপে ১০ লাখের বেশি অভিবাসী পৌঁছেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শরণার্থীর স্রোত এ বছর ইউরোপে প্রবেশ করেছে বলে সংস্থাটি বলছে।
আইওএমের বরাত দিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলোতে ১০ লাখ পাঁচ হাজার ৫০৪ শরণার্থী প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে আট লাখ ১৬ হাজার ৭৫২ শরণার্থী গ্রিসের সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গেছে। এদের মধ্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীর সংখ্যাই বেশি।
এসআইএস/আরআইপি