অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসায় গজ-ব্যান্ডেজই ভরসা!


প্রকাশিত: ০২:৩৩ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পোড়া রোগীর জরুরি চিকিৎসায় গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও পভিসেপই একমাত্র ভরসা। পোড়া রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো ধরনের পোড়া রোগীর সুচিকিৎসায় দ্রুত জরুরি চিকিৎসাসেবা অত্যাবশ্যক।

কিন্তু বাস্তবতা হলো ঢামেক বার্ন ইউনিটে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন, ওষুধ ও বিভিন্ন ক্রিমসহ জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসা বিলম্বিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পকেটে  নগদ নারায়ণ না থাকলে মুমূর্ষু পোড়া রোগীরও চিকিৎসা মেলেনা এমন অভিযোগও পওয়া গেছে।   

মঙ্গলবার সরেজমিন বার্ন ইউনিট পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগে আসা মাত্রই রোগীর স্বজনদের হাতে ওষুধের তালিকা তুলে দেয়া হচ্ছে। স্বজনরা চিকিৎসাসরঞ্জাম কিনে আনলে তাদের রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন আর যাদের টাকা নেই তাদের রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে বিলম্ব।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক নার্স ও ওয়ার্ডবয় জানান, বার্ন ইউনিটে বর্তমানে গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও পভিসেপ লোশন ছাড়া আর কোন চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহ নেই। ফলে তারা রোগীর স্বজনদের বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনেতে বলায় বাধ্য হচ্ছেন।

সকাল সাড়ে ১১টা। বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগে মাগো বাঁচাও জ্বলে যাচ্ছে বলে চিৎকার করছে সাত বছরের ছোট শিশু খোকন। নারায়ণগঞ্জের সস্তাপুর এলাকার কুদ্দুস আলী ও রমিজা দম্পত্তির ছেলে খোকন সকালে মাটির চুলার সামনে গরম তাপ পোহানোর সময় পরিহিত পাঞ্জাবিতে আগুন ধরলে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান খোকন অনেকক্ষণ ধরে চিৎকার করলেও তাকে স্যালাইন দিয়ে ফেলে রাখেন চিকিৎসক।

burn1কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, চিকিৎসকরা  বাইরের ফার্মেসি থেকে বেশ কিছু ওষুধ কিনে আনতে পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু তাতে দেরি হওয়ায় তার এ ভোগান্তি।  

ঠিক তার পাশেই ঢাকা উদ্যান থেকে আগত আনিছা নামের সমবয়সী একটি মেয়ের ড্রেসিং করছিলেন কবীর নামের একটি ছেলে। ছেলেটি বার বার আনিছার মাকে বলছিল, কলোপ্লাস্ট লাগবে, সাপ্লাই নেই, বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। আমার কাছে আছে, চাইলে দিতে পারি কিন্তু টাকা দিতে হবে।

মেয়েটির উদ্বিগ্ন মা তার শর্তে রাজি হওয়ায় ব্যান্ডেজ করা হয়। রোগী চলে গেলে পাশে দাঁড়ানো হাফিজ নামে এক ওয়ার্ড বয়ও সে টাকা ভাগাভাগি করে নেন। কবরির কাছে কিসের টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে হতচকিত হয়ে বলেন, রোগী খুশি হয়ে দিয়েছে।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নার্স জানান, তারা হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত নন, স্পেশাল আয়া। ওরা বেতন পায়না, রোগীর ড্রেসিং করে বিনিময়ে স্বজনদের কাছ থেকে টাকাপয়সা চেয়ে নেয়।  

বার্ন ইউনিটে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকা প্রসঙ্গে ঢামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা.নাজিমুননেছা বলেন, চাহিদার তুলনায় না হলেও বার্ন ইউনিটে প্রায় সব ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। ঢালাওভাবে রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধপত্র কেনার কথা না। তবে অনেক সময় সরবরাহ থাকলেও বাইরে থেকে কেনানোর অভিযোগ পান বলে জানান তিনি।

সারাদেশে বার্ন ইউনিট স্থাপন প্রকল্প সমন্বয়ক ও বার্ন ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সব ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু জরুরি বিভাগের রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কেনানোর কথা না। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থ্যা নেবেন বলে জানান।

এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।