বাল্যবিয়ে বন্ধে কিশোরীদের আর্থিক প্রণোদনা প্রয়োজন

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:৫৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২১

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মেহের আফরাজ চুমকি বলেছেন, কিশোরীদের বিয়ের বিষয়টি বারবার গণমাধ্যমে উঠে আসছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকারে কিশোরী ও তার গর্ভজাত সন্তানকে দেখিয়ে কত বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছে ও কত বছর বয়সে সন্তান হয়েছে, কী কী শারীরিক সমস্যা হচ্ছে ইত্যাদির মাধ্যমে বাল্যবিয়ের কুফল তুলে ধরা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন ভিন্নভাবে চিন্তার সময় এসেছে। কত শতাংশ পুরুষ কিশোরী বিয়ে করছেন এবার তাদের পরিচয় তুলে ধরুন। অনেকেই বিদেশ থেকে ফিরে কোন বাসায় অল্পবয়সী সুন্দরী কিশোরী রয়েছে তা খুঁজে বিয়ে করছেন। অনেকে বিয়ে করে কাবিন করেন না। যারা কিশোরীদের বিয়ে করছেন তাদের অপমান ও অসম্মান করেন। তারা যে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে তা তুলে ধরেন।

ওইসব পুরুষকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারলে বাল্যবিয়ে কমে যাবে মন্তব্য করে চুমকি বলেন, কিশোরীদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে পুরুষদের এত উৎসাহ কেন?

সোমবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্ল্যান বাংলাদেশ ও ডোব সেলফ স্টিম প্রজেক্টের সহায়তায় চিলড্রেন অ্যাফেয়ার্স জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের (সিএজেএন) উদ্যোগে ‘কিশোর-কিশোরীদের আত্মউন্নয়নে ইতিবাচক পরিবেশের ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সিএজেএন সভাপতি মাহফুজা জেসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রামচন্দ্র দাস, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, প্ল্যান বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্ক ওরলা মার্পি, ইউনিলিভারের সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বাল্যবিয়ে অর্থাৎ কিশোরীদের (১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী) বিয়ে বন্ধ করতে হলে তাদের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আর্থিক বা অন্যকোনো পুরস্কার তথা প্রণোদনার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। যাতে করে কিশোরীরা আত্মউন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে এবং পরিবারগুলোও যেন আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে কিশোরী মেয়েকে বিয়ে না দেয়।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রামচন্দ্র দাস বলেন, বাল্যবিয়ে রোধ ও কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য তথা তাদের সার্বিক আত্মউন্নয়নে সরকারিভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। করোনার কারণে বাল্যবিয়ে বেড়েছে।

দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, কিশোর-কিশোরীদের আত্মবিশ্বাস তৈরিতে যেসব উপাদান প্রয়োজন সেদিকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। একসময় দেয়ালপত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন, গল্প, কবিতা ও গান এবং বিকেল হলে খেলাধুলার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসের ভিত তৈরি হতো। কিন্তু বিজ্ঞানের এ যুগে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী চার দেয়ালে বন্দি হয়ে পড়েছে। একঘরের মধ্যেই মোবাইল নিয়ে একেকজন ব্যস্ত থাকছে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কিশোরী তথা নারীরা এগিয়ে চলেছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নারী উন্নয়নে রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটবে।

ইউনিলিভারের সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার জানান, কিশোর-কিশোরী তথা নারীদের আত্মউন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রমে তারা সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নারী রয়েছেন।

প্ল্যান বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্ক ওরলা মার্পি বলেন, কিশোর-কিশোরীদের আত্মউন্নয়নের সুযোগ করে দিলে তারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে দেখাতে পারে। নারী নির্য়াতন ও বাল্যবিয়ে বন্ধে কিশোর-কিশোরীদের আত্মউন্নয়ন ও স্বনির্ভরশীল করে তোলার বিকল্প নেই।

এমইউ/বিএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।