শিশুর জন্য ইন্টারনেট নিরাপদ করতে বাবা-মাকে বদলাতে হবে

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২১

করোনাকালে বিশ্বজুড়েই ইন্টারনেট নির্ভরতা বেড়েছে বহুগুণে। অনলাইন ক্লাসসহ বিভিন্নভাবে শিশুরা এ জগতে অবাধে বিচরণ করছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিশুর অবাধ বিচরণ আসলেই কতটুকু নিরাপদ?

শিশুর জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হলে আগে বাবা-মাকে বদলাতে হবে। প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের বাবা-মা সচেতন হলে সেটি শিশুর নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজে দেবে। তা না হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির শিকার হতে পারে।

সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবরের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘শিশুর জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস বিষয়ক জাতীয় কমিটি-২০২১।

মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সাইবার প্যারাডাইসের পৃষ্ঠপোষকতায় মাসব্যাপী সচেতনতামূলক এই কর্মসূচি চলছে।

শনিবার (৯ অক্টোবর) রাতে আয়োজিত ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ক্যাম জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট মো. ইকবাল হোসেন।

আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাজ্য সরকারের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে কর্মরত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মেহতাব গাজী রহমান, সাইবার নিরাপত্তা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিসিএ কার্যালয়ের সাইবার অপরাধ ও নিরাপত্তা বিভাগের উপ-নিয়ন্ত্রক (উপ-সচিব) হাসিনা বেগম। সঞ্চালক ছিলেন ক্যাম জাতীয় কমিটির সদস্য কাজী মুস্তাফিজ।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মেহতাব গাজী রহমান বলেন, অতিরিক্ত ইন্টারনেটনির্ভরতা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে। শিশুরা আগে যে সময়টা বাইরে গিয়ে খেলাধুলা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে কাটাতো, সে সময়টা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাচ্ছে। শিশুর ওপর ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি না সেটি বুঝতে চারটি লক্ষণ পর্যবেক্ষণের কথা বলেন এই বিশেষজ্ঞ।

সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টি আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে কি না, খাদ্যাভ্যাসে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না এবং চতুর্থত সামাজিক আচরণে আপনার সন্তান স্বাভাবিক আছে কি না। এগুলো বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে, সন্তানকে সময় দিতে হবে।

internet-a

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘শিশুরা ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে পুরোপুরি জানে না। তাই তারা সহজেই সাইবার বুলিংসহ বিভিন্ন সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিশুদের ইন্টারনেট জগতে নিরাপদ রাখতে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার (প্রাইভেসি) বিষয়ক খুঁটিনাটি তাদের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

যেমন পাসওয়ার্ড, লোকেশন, বাসার ঠিকানা, ফোন নম্বর- এগুলো কোনোভাবেই শেয়ার করা যাবে না। এছাড়াও শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদের প্রতি প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের চর্চার পরামর্শ দেন তিনি। সহজেই বিভিন্ন ডিভাইসে এখন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সুবিধা পাওয়া যায়।

উপ-সচিব হাসিনা বেগম বলেন, নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে সচেতনতার বিকল্প নেই। এরই মধ্যে ৮২ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের অভিভাবককেও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণে যুক্ত করেছি আমরা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির শুরুতে কিছুদিন অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল।

এ সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে তরুণীরা হয়রানির শিকারও হয়েছেন অনেক। তখন আমরা ওয়েবিনার আয়োজন করে আবার কর্মসূচি শুরু করলাম। (কন্যাকথা) konnakothacca.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরকারিভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি সারা দেশে চলছে বলেও জানান এই সরকারি কর্মকর্তা। এই সচেতনতামূলক কাজে সম্মিলিতভাবে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল হোসেন বলেন, শিশুর জন্য সাইবার জগতকে নিরাপদ করতে হলে আগে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করতে হবে। তবেই আমরা দেশে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি গড়তে পারবো।

এমইউ/এমআরএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।