নিউ ইয়র্কে লাল-সবুজের আনন্দে `বিজয়ের কবিতা` পাঠ
বাঙালি জাতির রক্তকণায় মিশে আছে যে বিজয়ের যে আনন্দ, বাংলা কবিতা তারই উত্তরাধিকার। যে মাতৃস্মৃতি আমরা পেছনে রেখে এসেছি- শোধ করতে চাই এর সামান্য ঋণ। এই প্রত্যয় নিয়েই নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হলো- `বিজয়ের কবিতা` পাঠ। নিউ ইয়র্কের সনম টিভি`র সৌজন্যে ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। এস্টোরিয়ার ক্লাব সনমে যখন শুরু হয় এই অনুষ্ঠান তখন হলরুম ছিল দর্শক-শ্রোতায় কানায় কানায় পূর্ণ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি লিয়াকত আলী। এরপরই উপস্থাপকের দায়িত্বে আসেন কবি এবিএম সালেহউদ্দিন। তার সহযোগী উপস্থাপক ছিলেন কবি ছন্দা বিনতে সুলতান। মহান শহীদ ও দেশমাতৃকার প্রতি সম্মান দেখিয়ে একমিনিট নীরবতা পালনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। উদ্বোধনী কবিতা পাঠ করেন কবি বেগম নূরজাহান কাদের। তিনি তাঁর বক্তব্যে, একাত্তরের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ভাবতে পারিনি বেঁচে থাকবো। আমার স্বামী কাপড় কিনে এনে দিয়ে বলেছিলেন, একটি পতাকা তৈরি করো। আমি লাল সবুজে মানচিত্র আঁকা যে পতাকাটি সেলাই করেছিলাম- তা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি। নিয়ে এসেছি এই প্রবাসেও। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। এর অর্জন আমাদের শাণিত করছে এবং করবে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন কবি ফকির ইলিয়াস। তিনি বলেন, এই পরবাসে আমাদের অভিবাসী সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশের জন্য জমিন প্রয়োজন। প্রয়োজন উদার ক্ষেত্র। আমরা সেটাই নির্মাণ করতে চাইছি। তিনি বলেন, কবি বেগম নূরজাহান কাদের হাতে তৈরি যে পতাকাটি বয়ে বেড়াচ্ছেন- আমি নিশ্চিত `বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর` তা একদিন নিতে চাইবে। কবি বলেন, কবিগুরু বলেছেন- `আমার যেটুকু সাধ্য-করিব তা আমি`। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, এই প্রবাসে `একুশের কবিতা`, `স্বাধীনতার কবিতা`, `বৈশাখের কবিতা`, `প্রেম ও বিদ্রোহের কবিতা`, `ভালোবাসার কবিতা`, গ্রীষ্মের কবিতা`, `বসন্তের কবিতা` - এমন অনেক বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান হতে পারে। আপনারা তা ভেবে দেখতে পারেন, কবি ফকির ইলিয়াস দর্শক-শ্রোতার কাছে প্রস্তাব রাখেন।
অনুষ্ঠানে প্রথম কবিতাটি পড়েন কবি লিয়াকত আলী। কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন প্রবাসের বিশিষ্ট আবৃত্তিকার- মুজিব বিন হক, লুৎফুন নাহার লতা, রেখা আহমেদ, জি এইচ আরজু, আবীর আলমগীর, মিজানুর রহমান বিপ্লব, সাবিনা নীরু, মিতা কর্মকার, জাফর উল্লাহ মিলন, ছন্দা বিনতে সুলতান, সাঈদা পারভীন, মনিজা রহমান। প্রবাসে সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধের প্রক্ষাপট নিয়ে কথা বলেন বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ও সনম টিভির কর্ণধার তৌফিক কাদের। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ঐক্যের ভরসাস্থল। তা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারি না। একাত্তরে কিছু লোক ছাড়া গোটা বাঙালী জাতি যেভাবে মুক্তির চেতনায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন- আজ আমাদের সেই পথেই এগোতে হবে।
বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ছাড়াও কবি, লেখক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মিরা অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা ও আবৃত্তি করেন। বিজয়ের কবিতা পাঠে অংশ নেন কবি ফকির ইলিয়াস ,কবি শামস আল মমীন, গীতিকার জীবন চৌধুরী, কবি হোসাইন কবীর, কবি সৈয়দ মামুনুর রশীদ,কবি শাহেদ সাদ উল্লাহ, কবি আশরাফ হাসান, আবু রায়হান, রওশন হাসান, আনোয়ার সেলিম, শরিফুল আলম, শামস চৌধুরী, মুনিয়া মাহমুদ, জুলি রহমান, আবুল বাশার, শামীম আরা আফিয়া, আব্দুল্লাহ জুবায়ের, আলম সিদ্দিকী, মনিকা রায়, তাহমিনা শহীদ, মমতাজ আলো, লুৎফুর রহমান, ডা. মেছের আহমেদ, মিশুক সেলিম, রেজাউল করিম রেজা, হাসানুর রহমান, হাবিব রহমান, শাম্মী আখতার, শাহাদত হোসেন, আবিদুর রহিম, সাবেদ সাথী ও একমাত্র শিশু আবৃত্তিকার সুমাইয়াহ সুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক ঠিকানার নির্বাহী সম্পাদক জাভেদ খসরু, বিশিষ্ট সাংবাদিক তাসের মাহমুদ, লেখক শামসাদ হুসাম, কবি স্বপ্ন কুমার, রাজনীতিক সিরাজ উদ্দিন সোহাগ, রাজনীতিক নূরে আলম জিকু, রাজনীতিক আব্দুর রহমান, রাজনীতিক জসিম উদ্দীন, কম্যুনিটি একটিভিস্ট নার্গিস আহমেদ, শিল্পী বাবলী হক, শিল্পী চিত্রা এষ- সহ আরও অনেক সুধীজন। অনুষ্ঠানে আমেরিকান সমাজকর্মী ও শিক্ষাবিদ মার্ক ওয়েনবার্গের কন্ঠে প্রখ্যাত কবি অ্যালেন গীনসবার্গের সেই বিখ্যাত কবিতা ` সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড` উপস্থিত সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় একাত্তরে। কবিতায় সেই দৃশ্যের বর্ণনা শিউরে তুলে সবাইকে।
বিজয়ের কবিতায় সমাপণী বক্তব্য রাখেন কবি শামস আল মমীন। তিনি বলেন, কবিতা জীবনের কথা বলে। কবিতা আমাদের পাঁজরকে ঋদ্ধ করে। অত্যন্ত শাণিত এই সাহিত্য, জাগায় সমাজের বিবেক। তিনি বলেন, আমরা সবার কবিতা শুনতে চেয়েছি। তাই অনুষ্ঠানটি ছিল সকলের জন্যই উন্মুক্ত। প্রবাসে এই আয়োজন অব্যাহত থাকুক। অনুষ্ঠানটির রূপকল্প প্রণয়নে তিনি তার সতীর্থ অন্য তিন কবি ফকির ইলিয়াস, কবি এবিএম সালেহউদ্দিন ও কবি লিয়াকত আলীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করে বলেন- কাজটি কিন্তু সহজ ছিল না। কিন্তু প্রবাসের অগণিত কবিতাপ্রেমি এটাকে নান্দনিক করে তুলেছেন দীর্ঘ চার ঘন্টা উপস্থিত থেকে।
সবশেষে সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে রাত দশটায় শেষ হয় এই মহৎ আয়োজন।
এইচআর/এমএস