‘প্রবীণদের প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা’
মিরপুর ৬ নম্বর বাজারে লেবুর শরবত বিক্রি করেন সত্তরোর্ধ্ব সিদ্দিকুর আলম। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সিদ্দিকুরের দুই ছেলে থাকেন দেশের বাইরে। দুই বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর টুকটাক ব্যবসা-বাণিজ্য করে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নিজেকে শামিল রেখেছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা তাকে ভীষণ রকমের পীড়া দিচ্ছে। যে বয়সে বিশ্রাম করার কথা, সেই বয়সে অনেক প্রবীণ করছেন কায়িক পরিশ্রম। ক্ষয়িষ্ণু শরীরে জড়িয়ে আছে রোগ-শোক। সমাজ থেকে বিচ্যুতি, যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতা প্রবীণদের সমস্যাকে জটিলতর করে তুলেছে।
২০১৩ সালর একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে দুই-তৃতীয়াংশ প্রবীণই দরিদ্র। ৫৮ ভাগ প্রবীণের মৌলিক চাহিদা পূরণের সামর্থ্য নেই। এমন বাস্তবতায় শুক্রবার (১ অক্টোবর) পালিত হলো বিশ্ব প্রবীণ দিবস।
সিদ্দিকুর জানান, সাতক্ষীরায় পৈত্রিক বাড়ির কেউ কেউ তার খোঁজ নেন। সন্তানরা খোঁজ নেন না আজ বছর পাঁচেক হলো। ইউরোপে থাকা সন্তানদের নিয়ে তার কোনো আক্ষেপও নেই। তার চাওয়া সন্তানরা যেন দূর পরবাসে ভালো থাকেন।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, কাশি-ব্যথার ওষুধ নিয়মিত খাওয়া লাগে। বর্ধিত পল্লবীর বস্তিতে একটা পরিবার তাকে খাওয়ায়, কোনো টাকা নেয় না। শরবত বিক্রি করে যে আয় হয়, সেটা চিকিৎসার পেছনেই চলে যায়। তিনি বলেন, কোনো চাওয়া নাই আর জীবনে। সন্তানরা ভালো আছে। আমিও ভালো আছি।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশ প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেন। ২০২৫ সাল নাগাদ প্রবীণদের এই সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০৫০ সালে প্রায় সাড় ৪ কোটি, ২০৬১ সালে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। ২০৫০ সালের দিক এদেশের ২০ শতাংশ নাগরিক প্রবীণ হবেন এবং শিশুর সংখ্যা হবে ১৯ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের সবখানেই প্রবীণের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি ও মানুষের নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়েছে আয়ু। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসাধারণ সাফল্য বর্তমান বিশ্বে মানুষ প্রায় ১২০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। বয়স বৃদ্ধির এ হারে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। দিন দিন বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যাও।
বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ নিবাসের ব্যবস্থাপক ডা. মহসিন কবির জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বলছি ৫৯-৬০ বছরের পর আর কোনো কাজ নেই, রিটায়ারমেন্ট। সেখান থেকে মানুষ ৭২-৭৩ বছর বাঁচছে। এই যে ১৩-১৪ বছর, এই সময় একজন মানুষের দায়িত্ব আসলে কে নিচ্ছে। অনেকেই বলে পরিবার নেবে, আসলে পরিবার সেই দায়িত্ব নিচ্ছে না। কারণ পরিবার প্রথা ভেঙে গেছে। এখন আর যৌথ পরিবার নেই। এতে বিপদে পড়ে যান প্রবীণরা। এমন অবস্থায় তাদের অর্থনৈতিকভাবে কিভাবে সচ্ছল রাখা যায় সেইদিকে নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রবীণদের প্রধান সমস্যা হলো দারিদ্রতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। শরীরবৃত্তীয় কারণে প্রবীণ বয়সে কর্মক্ষমতা লোপ পায়। চাকরিজীবীরা অবসরে চলে যান। আর অন্যান্য শ্রমের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তারা ধীরে ধীরে তাদর কর্মপরিধিও গুটিয়ে ফেলেন। তাই একসময় তাদের উপার্জনের আর কোনো পথই খোলা থাকে না। বার্ধক্যে তাই দারিদ্রতায় আক্রান্ত হন বেশিরভাগ প্রবীণ।
এসএম/এমআরআর