ফুটবলে মেয়েদের সাফল্য

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৪:২৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫

পরিচর্যা করলে যে সুফল পাওয়া যায় সেটি খেলাধুলা বা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন এর প্রমাণ দিল বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালে গিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা ফুটবলের আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা।

মেয়েদের জাতীয় বা বয়সভিত্তিক কোনো দলের প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য এটি। এর ফলে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হল আরো একটি পালক। বিশেষ করে নারী ফুটবলের জন্য এক অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে কলসিন্দুরের মেয়েদের এই হিমালয় জয়। আমরা বাংলাদেশের এই সাফল্যে যারা অবদান রেখেছেন তাদের অভিনন্দন জানাই।

ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত ২৫ এপ্রিল। কিন্তু প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের কারণে ফাইনালটি স্থগিত করে এএফসি (এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন)। পূর্বনির্ধারিত সেই ফাইনাল হয়েছে গতকাল সোমবার। ৭০ মিনিটের ম্যাচে দুর্দান্ত দাপটের সাথে খেলেই জয় পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। খেলা শুরুর ১৬ মিনিটেই গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত থেকে স্ট্রাইকার মার্জিয়ার প্রায় ৩৫ গজ দূরের লক্ষ্যভেদী শট নেপালের গোলরক্ষক রবিতা কুমারীর মাথার ওপর দিয়ে ঢুকে যায় জালে। শেষ পর্যন্ত এই  ১ গোলের লিড ধরে রেখে ১-০ তে জয় পায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের এই জয়ের পেছনে রয়েছে আরেক ইতিহাস। গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষা ছোট্ট গ্রাম কলসিন্দুরে ভোর হয় ফুটবলের শব্দে। বিশেষ করে এই এলাকার অদম্য মেয়েরা নিয়মিত ফুটবল খেলে। চর্চা করে। একাদশে কাল খেলেছে কলসিন্দুরের ছয় ফুটবলার সানজিদা, শিউলি, শামসুন্নাহার, মারিয়া, মার্জিয়া ও তসলিমা। ডাগআউটে আরও ছিল মাহমুদা, রূপা, তহুরা ও নাজমা। এই জয়ের পেছনে যে কলসিন্দুরের মেয়েদের অবদান অনেক বেশি সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তই যদি কলসিন্দুরের মতো এমন ফুটবলময় করা যেত তাহলে ক্রিকেটের মত ফুটবলেও আমাদের সাফল্য বয়ে নিয়ে আসা কোনো কঠিন কাজ হবে না।

যে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হয়। খেলাধুলার ক্ষেত্রে কথাটি আরও বেশি প্রযোজ্য। বাংলাদেশের ফুটবল এখনো অনেক পিছিয়ে। সেখানে নারী ফুটবলাররা যে আশার আলো দেখাচ্ছে সেটি ধরে রাখতে হবে। আমাদের সমাজে নারীদের এমনিতেই নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এগুতে হয়। খেলাধুলার ক্ষেত্রেও মেয়েদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। যদিও অনেকেই এগিয়ে আসছে। এ জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বাল্য বিয়েসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষাক্ষেত্র থেকেই মেয়েরা ঝরে পড়ে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে তাদের ধরে রাখতে হলে একটা পেশাদারি মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কে এগিয়ে আসতে হবে।  আজকের অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল দলের সানজিদা, শিউলি, শামসুন্নাহার, মারিয়া, মার্জিয়া ও তসলিমারাই আগামী দিনের ফুটবলের নেতৃত্ব দিবে। তাই এদের পরিচর্যা অত্যন্ত জরুরি।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।