ভালো থাকুন নন্দিত যুবরাজ

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১২ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

‘ছিঃ ছিঃ, তুমি এত খারাপ’- এই একটি সংলাপই যথেষ্ট এদেশের নাট্যজগতের যুবরাজকে পরিচয় করিয়ে দিতে। কেননা, নব্বই দশকে এই সংলাপটি ছিলো সকল নাট্যামোদি দর্শকদের প্রিয়। আর যিনি দারুণ নাটকীয়তায় এই বাক্য সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি সবার প্রিয় অভিনেতা খালেদ খান।

নন্দিত এই অভিনেতার আজ দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর গুণী এই অভিনয়শিল্পী ৫৫ বছর বয়সে চিরদিনের জন্য পরপারে পাড়ি জমান। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে জাগো নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে তিনি নিজের পারিবারিক নামকে ছাপিয়ে যুবরাজ নামেই পরিচিত ছিলেন। পরে টিভি নাটকে অভিনয় করে পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। তিনি একাধারে মঞ্চ ও টিভি অভিনয়শিল্পী এবং নির্দেশক।

খালেদ খান ১৯৫৮ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম এবং ১৯৮৩ সালে ফিন্যান্স বিষয়ে এমকম সম্পন্ন করেন খালেদ খান।

দীর্ঘ ২৮ বছর নিয়মিত থিয়েটার ও টিভি নাটকে অভিনয় করে শক্তিমান এক অভিনেতায় পরিণত হয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে নব্বই দশকে একাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। মঞ্চে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, অচলায়তন, নুরালদীনের সারা জীবন, ‘ঈর্ষা’, দর্পণ, গ্যালিলিও ও ‘রক্তকরবী’।

নাটকে সফলভাবে পথচলার পর পরিচালনাও শুরু করেন খালেদ খান। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারা, পুতুল খেলা, কালসন্ধ্যায়, মাস্টার বিল্ডার, ক্ষুদিত পাষাণসহ বেশ কিছু।  

১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে টিভি নাটকে অভিষেক হয় তার। তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক হলো ‘সিঁড়িঘর’। এরপর অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করে দর্শক হৃদয় জয় করেছেন। একাধিক নাটকে তার বেশ কিছু সংলাপও জনপ্রিয়তা পায়।

বিশেষ করে নব্বই দশকের নাটক ‘রূপনগর’ -এ তার ‘ছিঃ ছিঃ, তুমি এত খারাপ’ শীর্ষক সংলাপটি চলে আসে মানুষের মুখে মুখে। এখানে ভিলেন হিসেবে তাকে দেখা গেলেও নিজেকে তিনি অভিনয় দিয়ে আলোচনায় নিয়ে এসেছিলেন।

তার অভিনীত জনপ্রিয় অন্যান্য নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এইসব দিনরাত্রি, কোন কাননের ফুল, রূপনগর, মফস্বল সংবাদ, অথেলো এবং অথেলো, সহ আরও বেশ কিছু। মঞ্চ ও টিভি নাটকের ক্ষেত্রে খুব বেছে বেছে কাজ করার পক্ষপাতী ছিলেন খালেদ খান। সে কারণেই তার করা বেশির ভাগ নাটকই ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে।

মঞ্চ নাটকে অনবদ্য অবদানের জন্য মোহাম্মদ জাকারিয়া পদক, সেরা অভিনেতা হিসেবে নুরুন্নাহার স্মৃতিপদক, সেরা পরিচালক হিসেবে সিজেএফবি পুরস্কার এবং সেরা টিভি অভিনেতা হিসেবে ‘ইমপ্রেস-অন্যদিন’ পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি।

খালেদ খানের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদ খানকে নিয়ে শীঘ্রই একটি বই প্রকাশ করা হবে। গেল বছর এই দিনে খালেদ খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আবৃত্তি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। ১৯৯৬ সালে খালেদ খানের কণ্ঠে কিছু আবৃত্তি রেকর্ড করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে সিডি প্রকাশ করা হয়নি। ধারণকৃত আবৃত্তিগুলোই অ্যালবামে প্রকাশ করা হয় প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে।

চোখের দেখায় খালেদ খান হয়তো আমাদের কাছের কেউ আর নন, তিনি উপস্থিতিতেও নেই জায়গা দখল করে। কিন্তু তার রেখে যাওয়া সৃষ্টিকর্ম আমাদের মাঝে চিরদিন রয়ে যাবে প্রতিষ্ঠানের মতোই অবিচল আর অম্লান হয়ে। অদেখা ভুবনের যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন আমাদের যুবরাজ।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।