বছরজুড়ে গুরুত্ব পেয়েছে সাকা, মুজাহিদ ও কামারুজ্জামান


প্রকাশিত: ০৫:৪৬ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঘটনার জন্য বছর জুড়েই মানুষের আগ্রহ ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সরকারের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে ইতিহাসের দায়মুক্তির বিচার শেষ করার দ্বিতীয় বছর ছিলো ২০১৫ সাল।

তাই বছরের শুরু থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আলোচনায় ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। বছরের শেষ দিকে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনালের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচারকার্যক্রম ও ফাঁসির রায় কার্যকরও ছিল সুপ্রিমকোর্ট তথা দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।

সঙ্গে ছিলো বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়কে কেন্দ্র করে একজন বিচারপতিকে কেন্দ্র করে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার কলাম নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আদেশ ও ছিল দেশের মানুষের কাছে উদ্রেগের বিষয়। তার সঙ্গে সঙ্গে আরো কিছু মামালার কার্যক্রমেও মানুষের দৃষ্টি ছিল সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের দিকে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা চলবে কিনা এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনার দিকেও বিশেষ আকর্ষণ ছিল সর্বোচ্চ এই আদালতের দিকে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন ও চিকিৎসা ছাড়া আলোচনায় ছিল মাহমুদুর রহমান মান্না, ভারতে অবস্থানরত বিএনপির নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদকে নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনার বিষয়।  

নিজামীর আপিলের রায় ৬ জানুয়ারি
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আনা আপিল মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ৬ জানুয়ারি।

গত ৮ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে নিজামীর আপিলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।
 
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। নিজামীর পক্ষে তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির বিপরীতে বক্তব্য পেশ করার পরে নিজামীর আপিল মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে জাতির মেধাবী সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট চারটি অপরাধের দায়ে নিজামীর ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন আনীত মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

এর মধ্যে চারটি অর্থাৎ (২, ৪, ৬ নম্বর) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।

অন্য চার অভিযোগে (১, ৩, ৭ এবং ৮ নম্বর) তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

৫ ও ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল।

নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর আপিল দায়ের করেন তিনি।
 
সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি আপিল বিভাগে
চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজ করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে দেয়া রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষের জনগণকে দমাতে গঠিত আলবদর বাহিনীর মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাবেক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে বিতর্কিত সাকা চৌধুরী। তাকে চারটি অভিযোগে (চার্জ) মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সাকা চৌধুরী ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা ও গুমের অপরাধ সংগঠিত করেছেন বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। ক্যালকুলেটিভ ও সুচিন্তিতভাবে সাকা চৌধুরী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এ দুই আসামি (সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ) কিভাবে ৭১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে উঠে এসেছে।

এর আগে ১৪ অক্টোবর খালাস চেয়ে রিভিউ করেন রাজনৈতিক দুই দলের এই নেতারা। ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায় । তার ১৩ দিন পরে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ।

২০ অক্টোবর অবকাশকালীন চেম্বার আদালত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন দুটি শুনানির জন্য ২ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেন। পরে সাকা ও মুজাহিদের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানির দিন ১৭ নভেম্বর পুনর্নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। ১৭ তারিখ রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১৮ নভেম্বর দিন ঠিক করেন আপিল বিভাগ। ওইদিন সাকা ও মুজাহিদের রিভিউ খারিজ করে আদেশ দেয়া হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে ও ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড দিয়ে  রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে নাশকতার মামলায় সাকাকে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরই ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন জামায়াত নেতা মুজাহিদ।

কামারুজ্জামান ফাঁসির দণ্ড পেল আপিলে
চলতি বছরের ৬ এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মামলায় আপিলের রিভিউ খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তার পর ১১ এপ্রিল রাতে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এর আগে ৫ এপ্রিল কামারুজ্জামানের করা রিভিউ আবেদনের উপর শুনানি করেন উভয় পক্ষ। তার আগে ৯ মার্চ রিভিউ শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে, পরে ১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। ৫ মার্চ রিভিউ আবেদন করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন।  
 
২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তারও আগে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
 
এফএইচ/একে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।