বড়দের অসচেতনতায় ডেঙ্গুর ভয়াল রূপ দেখছে শিশুরা
সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তাওহীদ। চলতি মাসের ৬ তারিখ মিরপুরের তালতলায় খালার বাড়িতে বেড়াতে আসে। দুইদিন পর শরীরে জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে তাওহীদকে নিকটবর্তী ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে দেন খালা শিলা আকতার।
এরপর জ্বর ও শরীরে ব্যথা বাড়লে তাওহীদকে ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার মা। পরিস্থিতিতে জটিল হলে চিকিৎসকরা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করান। সাতদিন আইসিইউতে থাকার পর তাকে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বরে) ডেঙ্গু ইউনিটের সাধারণ বেডে স্থানান্তর করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে চলছে করোনা মহামারি। ডেঙ্গুরও প্রাদুর্ভাব রয়েছে। একই সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের কারণে রয়েছে জ্বর-ঠাণ্ডা। সব মিলিয়ে অনেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে বাসায় বসে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে করে জটিল হচ্ছে শিশুদের ডেঙ্গু।
চিকিৎসকরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গুর ধরন একেবারেই আলাদা। চলতি বছরের মার্চ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গুর রোগীর চিকিৎসা নিয়েছে ১৪৬ জন শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১১ শিশু। আইসিইউতে আছে সাতজন। আর গত দুই মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ১০ শিশু।
তাওহীদের মা শেফালি আকতার জাগো নিউজকে বলেন, ১৫ দিন ধরে ছেলের জ্বর। তার খালারও ডেঙ্গু ছিল, বাসায় চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছে।
ছেলের চিকিৎসায় গত ১৫ দিনে এক লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিলার ডেঙ্গু হয়েছে, কারণ তিনি বাসার নিচতলায় থাকতেন। আমার ছেলে বাসায় চিকিৎসা নিয়েছে কয়দিন। কিন্তু তার শরীর আরও খারাপ হয়েছে। ডাক্তার বলেছে আর কয়েকদিন দেখে রিলিজ দিয়ে দেবে।
এদিকে চার বছরের মাইশা আটদিন ধরে শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি। তার বোন মীম জানান, জ্বর হওয়ার দুইদিন পর মাইশাকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা ভর্তি করতে বলেন।
তিনি জানান, ঢাকার মিরপুরে কাজীপাড়ায় তাদের বাসা। মাইশা খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। সেই বাসায় কয়েকজনের ডেঙ্গু হয়েছে। বাসায় দুইদিন চিকিৎসা শেষে জ্বর না কমায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক রোগতত্ত্ববিদ কিংকর ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। সাধারণ জ্বর ভেবে অভিভাবকরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন দেরিতে। এতে শিশুদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বরকে অবহেলা না করে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু ও করোনা পরীক্ষা করিয়ে, সেই অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুকে স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। তবে তরল খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। জুস, সুপ, স্যালাইন খাওয়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। শিশুদের ডেঙ্গু থেকে বাঁচাতে ফুলহাতা জামা কাপড় পরানো, সব সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর পাশাপাশি বাড়িঘরের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শও দেন চিকিৎসকরা।
এসএম/জেডএইচ/এএসএম